একসময় মানচিত্র, কম্পাস, স্কেল  ইত্যাদি দিয়ে মেপে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমার সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা হত। জিপিএস ও জিআইএস উদ্ভাবনের ফলে সেটা অনেক সহজ হয়ে যায়। কবুতরের মস্তিষ্কের গঠন থেকে এ প্রযুক্তি আবিস্কার করা হয়েছে। শুরুতে এর ব্যবহার সামরিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল পরে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য এ প্রযুক্তিটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জিপিএস একটি কৃত্রিম উপগ্রহ ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আর জিআইএস হলো ভূ-পৃষ্টের কোনো স্থানের উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য গৃহীত প্রযুক্তি।

————–জিপিএস

জিপিএস

জিপিএস এর ইংরেজি হলো Global Positioning System (GPS)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে উদ্ভাবিত একটি প্রযুক্তি। মার্কিন সামরিক বাহিনী তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে ১৯৭৭ সালে জিপিএস এর প্রাথমিক কাজ শুরু করে। তারা ১৯৯৫ সালে ২৪ টি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্টি নেটওয়ার্ককে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ব্যবহারযোগ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম হিসেবে ঘোষোণা করে। সেইসাথে সিস্টেমটি বিশ্বের সকল বেসরকারী লোকদের জন্য উন্মূক্ত করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে অবস্থিত স্যাটেলাইট ট্রেনিং স্টেশন থেকে US Military স্যাটেলাইটগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করে।

পৃথিবী ও স্যাটেলাইটের ঘূর্ণায়মান অবস্থায় একটি জিপিএস রিসিভার

প্রযুক্তির নব নব আবিস্কারের মধ্যে জিপিএস একটি মূল্যবান যন্ত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ যন্ত্রের সাহায্যে মূহুর্তের মধ্যে আমরা কোনো একটি স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ থেকে শুরু করে সব বিষয়ে জানতে পারি। এর মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে ঝামেলা ছাড়াই জমির সীমানা চিহ্নিত করা যায়। দূর্যোগকালীন সময়ে কোনো একটি স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ ও সময় জেনে সঠিক স্থান সহজে নির্ণয় করা সম্ভব। গাড়ি, মোবাইল, জাহাজ, প্লেন ছাড়াও বড় বড় শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে, যুদ্ধে শত্রু সেনাদের নজর রাখতে, বোমা মিসাইলের নিশানাকে সঠিক করতে এবং কোনো বিশেষ স্থানের উপর নজর রাখতে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। জিপিএস সফটওয়্যারে রাস্তাঘাট ছাড়াও পুলিশ স্টেশন, হোটেল, পর্যটন স্থান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও পেট্রোল পাম্প ইত্যাদির তথ্য দেয়া থাকে। বর্তমান অবস্থানের আশেপাশে উল্লেখিত কোনো কিছু থাকলে জিপিএস ডিভাইসে তা প্রদর্শন করে।

জিপিএস স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেম যা কমপক্ষে ২৪টি  স্যাটেলাইট দ্বারা গঠিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০০ কিলোমিটার উপরে ৬টি অরবিটে ২৪টি স্যাটেলাইট পৃথিবীর চারদিকে ২৪ ঘণ্টা ২ বার ঘুরছে। অরবিটগুলো এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় কমপক্ষে ৪টি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হয়।

জিআইএস

জিআইএস এর ইংরেজি হলো Geographical Information System (GIS)। ভৌগোলিক মানচিত্রের মাধ্যমে বিশেষ কোনো তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করাকে জিআইএস বলে। এটি ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থান সম্পর্কিত উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য গৃহীত প্রযুক্তি। জিআইএস স্থানিক ও পারিসরিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ, মানচিত্রায়ণ, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন, পানি গবেষণা, আঞ্চলিক গবেষণা, নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা, জনসংখ্যার বিশ্লেষণ, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশ্লেষণ, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, খনিজ তেল ও গ্যাস উত্তোলন  এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি কাজে সহায়তা করে।

১৯৬৪ সালে কানাডায় সর্বপ্রথম এই কৌশলের ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৮০ সালের দিক থেকে এটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। বাংলাদেশে আধুনিক জিআইএস এর ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯১ সালে। আধুনিক কালের পার্সোনাল কম্পিউটার থেকে  শুরু করে সুপার কম্পিউটার পর্যন্ত সকল প্রকার কম্পিউটারে জিআইএস সচল হয়। তবে জিআইএস স্থাপনার জন্য বেশকিছু উপকরণ প্রয়োজন, যেমন- কম্পিউটার, ডিজিটাইজার, জিপিএস, প্লটার, নেটওয়ার্ক, সিডি-রম ড্রাইভ, প্রিন্টার ও জিআইএস ভিত্তিক সফটওয়্যার।

জিআইএস এর  উপাদান সমূহ হলো- হার্ডওয়্যার (Hardware), সফটওয়্যার (Software), নেটওয়ার্ক (Network), উপাত্ত (Data), নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠী (People), পদ্ধতি (Procedures)।

জিপিএস ও জিআইএস টেকনোলজি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে এবং প্রভাব বিস্তার করেছে আমাদের চলাফেরার প্রতিটি ক্ষেত্রেই। বিশ্বের আধুনিক এবং উন্নত সকল দেশেই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। একবিংশ শতাব্দীতে জিপিএস ও জিআইএস টেকনোলজির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দেশ ও বিশ্ব পৌঁছে যাবে উন্নয়নের দোড় গোড়ায় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আরও পড়ুনঃ সেরা চিকিৎসক ও দার্শনিক ইবনে সিনার জীবনী।

,