আমাদের দেশে এ ফলটি ডালিম, আনার এবং বেদানা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে বলা হয় Pomegranate  আর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে- Punica granatum । ভারত ও বাংলাদেশে তিন প্রকারের ডালিম দেখতে পাওয়া যায়। পাকিস্তান, ভারত, ইরান, আফগানিস্তান ও আফ্রিকায় ডালিম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজ ও হেকিমদের মতে ডালিম হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। 

ডালিমে এর ঔষধি গুণ

অনিদ্রা দূর হয়ঃ যারা অনিদ্রায় ভূগছেন তারা প্রতিদিন সকাল-বিকাল ঘৃতকুমারীর কিছু শাঁসের সাথে ডালিমের দু-চার চামচ রস মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হয়।

মহিলাদের প্রদররোগঃ মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল খুবই উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু’প্রকার। শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিমের ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ আন্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং নাইট্রিক এসিডের ভালো উৎস ডালিম। এটি রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য ডালিম খুব উপকারি ফল।

ক্যান্সার প্রতিরোধে ডালিমের ব্যবহারঃ গবেষণায় দেখা গেছে ডালিমের বীজ ক্যান্সারের কোষগুলোকে ক্রমবর্ধমান হতে বাঁধা দেয়। তাই খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ডালিম রাখা উচিত।

আমাশয় হলেঃ ডালিমগাছের ছাল পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি খেলে আমাশয় ভালো হয়।

রক্তপাত হলেঃ কেঁটে রক্তপাত হলে ডালিমের ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভালো কাজ করে।

হৃদরোগেঃ ঘৃতকুমারীর শাঁসের সাথে ডালিমের দু-চার চামচ রস মিশিয়ে দু-তিন সপ্তাহ খেলে হৃদরোগ ভালো হয়।

নাক দিয়ে রক্তপাতঃ হঠাৎ কারণ ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে তাহলে ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

মেধাহ্রাস পেলেঃ যারা স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যায় ভূগছে তারা ডালিমের রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে দু-তিন মাস খেলে উপকার পাবেন।

অজির্ণ রোগেঃ যারা নিয়মিত অজির্ণ রোগে ভগেন তারা ২-৩ গ্রাম ডালিমের খোসা চূর্ণ করে সামাণ্য ছাগলের দুধের সাথে মিশিয়ে কিছু দিন খেলে উপকার পাবেন। এছাড়া আপনি যদি নিয়ম করে অল্প মাত্রায় ডালিম বা ডালিমের রস খান তাহলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

র্ভস্রাব হলেঃ অনেক মহিলার অস্বাভাবিক গর্ভস্রাব হয়ার কারণে মা হতে পারছেন না। তারা ডালিমের পাতা বেটে, তার সাথে শ্বেতচন্দন বাটা কয়েক ফোঁটা মধুসহ দইয়ের সাথে ভালো করে মিশিয়ে দেড়-দুমাস দিনে একবার খেলে এ সমস্যা দূর হয়।

কৃমি হলেঃ ডালিম গাছের মূলের ছাল চূর্ণ ২-৩ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে, চাল ধোয়া পানির সাথে কয়েক দিন খেলে ফিতা কৃমি দূর হয়।

বয়সের ছাপ দূর হয়ঃ ডালিমে থাকা ভিটামিন ‘সি’ ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন কিছু পরিমাণে ডালিম খেতে পারেন।

স্বাস্থ্যের উন্নতে সাধন ও রক্ত শূন্যতা দূর করতেঃ ডালিম খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়ে রক্তে প্রবাহের উন্নতি ঘটে। তাই রক্ত শূন্যতা দূর হয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এটি খুবই উপকারি ফল। আপনি সুস্থ থাকার জন্য খাওয়ার রুটিণে ডালিম রাখতে পারেন।

ত্বকের যত্নে ডালিমের ব্যবহারঃ নিয়মিত ডালিম খেলে ত্বকে থাকা অবাঞ্চিত দাগ দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

বাত রোগেঃ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকগণ বলেছেন- ডালিমের রসে এক প্রকার ব্যথানাশক উপাদান রয়েছে যা অস্থিসন্ধিকে মজবুত করে এবং আর্থ্রাইটিস ভালো করে। সবুজ চা-এর সাথে ডালিমের রস মিশিয়ে খেলে বাত ভালো হয়। গবেষকগণ পরীক্ষা করে এর সত্যতা পেয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ ডাবের পানি যাদের জন্য হতে পারে মারাত্মক বিপদের কারণ।