তরমুজের ইংরেজি নাম হলো- Watermelon বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে- Citrullus lanatus । তরমুজ আফ্রিকার তাগালগে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়। সেখানে এ ফল Pakwan নামে পরিচিত। সাধারণত মরুর দেশে এই ফল বেশি খাওয়া হয়। সেখানে এর শাঁস দিয়ে আচার তৈরি হয়। আবার পাকা তরমুজের কালো বিচি রোদে শুকিয়ে ভেষজ ঔষধ তৈরি করা হয়। তরমুজ বহুজাতের হয়। তবে বাংলাদেশে মাত্র দু-তিন জাতের তরমুজ উৎপাদন করা হয়।
তরমুজে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এ ফলটির ৯২ শতাংশই পানি।শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম তরতাজা তরমুজে খাদ্য উপাদান হলো – জলীয় অংশ ৯৫.৮ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, আঁশ ০.২ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শ্বেসার ৬.৫ গ্রাম, ভিটামিন এ ৫৬৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ১৬ মিলিগ্রাম, শর্করা ৩.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.১৫ গ্রাম, লৌহ ৭.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৩ মিলিগ্রাম, বি২ ০.০৪ মিলিগ্রাম।
উপকারিতাঃ
- ক্লান্তির পর তরমুজের শাঁস বা শরবত খেলে ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তবে অন্তত এক বা দুই গ্লাস শরবত খেতে হবে।
- তরমুজে যে পটাশিয়াম থাকে তা মানব দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদপিন্ডের সুস্থতা রক্ষা করে।
- যারা গরমে কাজ করে বা বেশী ঘাম হয় তাদের নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীর তাড়াতাড়ি দুর্বল হয় না।
- তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুষ্ঠু রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, দাঁতের সমস্যা, চামড়ার সৌন্দর্য, মুখের ঘাঁ, সর্দি, গরম ও ঠান্ডা জ্বর প্রতিরোধে বেশ উপকার করে।
- তরমুজে আছে ক্যারোটিনয়েড। আর তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে চোখ ভালো থাকে এবং চোখের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- তরমুজ হাড়ের গঠন শক্ত ও মজবুত করে। হাড়ের ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- যাদের মুখে মেসতা বা ছোপ ছোপ কালছে দাগ আছে তারা একবাটি তরমুজ প্রতিদিন খেতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।
- তরমূজ ভাসডিলেশন এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে, ও কার্ডিওভাসকুলার এর সাথে সম্পর্কিত ফাংশনসমূহ উন্নত করে।
- তরমুজের রস কিডনির বর্জ্য মুক্ত করে। তাই কিডনিতে পাথর হলে, চিকিৎসকগণ ডাবের পানির পাশাপাশি তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- তরমুজে সিট্রোলিন নামক বিশেষ অ্যামাইনো এসিডের উপাদান রয়েছে। যা মানব দেহের পুরুষের শুক্রাণু ও মহিলাদের ডিম্বানুকে পরিপুষ্ট করে। যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
- তরমুজে বিটা ক্যারোটিন ও ম্যাগানিজ চামড়ার রোগ প্রতিরোধ ও মসৃণ করে। চামড়ার সৌন্দর্য এবং তারুণ্য ধরে রাখতে বেশ উপকারি।
- লাইকোপিনসহ বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ তরমুজ খাওয়ার অভ্যাসে বার্ধক্য দেরিতে আসে। ত্বকে সহজে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে না।
- কাঁচা তরমুজের শাঁস কুচি কুচি করে কেটে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এরপর এক কাপ গরম দুধে দুই চামচ তরমুজের গুঁড়ো মিশিয়ে সকাল ও বিকেলে খেলে অপুষ্টি দূর হয়।
- প্রবল টাইফয়েড জ্বরে পাকা তরমুজের রস খাওয়ালে জ্বর নেমে আসে।
আরও পড়ুনঃ সুস্থ থাকতে নিয়মিত ডিম খান।
- পাঁচ-ছয় গ্রাম পাকা তরমুজের কালো বিচি রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে গুলে একটু চিনি মিশিয়ে দু-তিন বার খেলে প্রসাব বেড়ে যাবে এবং প্রস্রাবের জ্বালা- পোড়া বন্ধ হবে।
- এটি নিয়মিত খেলে কোলন ক্যান্সার, , ব্রেস্ট ক্যান্সারের ফুসফুসের ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়।
- যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় গবেষকরা গবেষণায় দেখেছেন – তরমুজ নিয়মিত খেলে হার্টের সুরক্ষা হয়। রক্তনালীতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। শরীর জুড়ে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।
অপকারিতাঃ
- গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে অনেকেই ঠাণ্ডা তরমুজ খেতে পছন্দ করেন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আপনার পাকস্থলির ক্ষতি করতে পারে।
- দৈনিক ৩০ মিলিগ্রামের বেশি লাইকোপিন গ্রহণ খাদ্যে অরুচি, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাবের কারণ হতে পারে।
- নিয়মিত মদ্যপান করে যাঁরা তাদের জন্য এটি একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ, তরমুজের রাসায়নিক উপাদান লাইকোপিন অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশে লিভারের ক্ষতি করে।
- বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অতিরিক্ত এ ফলটি খেলে শরীরে জলীয় উপাদান অনেক বেড়ে যায়। ‘ওভার-হাইড্রেশন’-এর ফলে কিডনির নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরও অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
- যাদের দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে তাদের দৈনিক এক কাপের অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া ক্ষতিকর।
- নিউট্রিশনিস্ট রীতেশ তিওয়ারি বলেছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ ৩০ ও শর্করার পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম। একদিনে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত তরমুজ হজম করা সম্ভব, কারণ এতে শরীরে ঢোকে ১৫০ ক্যালোরি। কিন্তু, এর থেকে বেশি তরমুজ খেলে সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
সতর্কতাঃ
- রাতে তরমুজ খাবেন না। কারণ রাতে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
- তরমুজ কেটে ফ্রিজে রাখলে খাদ্য উপাদান কমে যায়।
- তরমুজের বিচি বেশি খেলে পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি লাগতে পারে।
- তরমুজে শাঁস অধিক লাল করার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম রং ভিতরে প্রবেশ করিয়ে থাকে এমন তরমুজ কিনবেন না ।
- কেনার সময় দেখে নিবেন যেন তরমুজ তাজা এবং পাকা হয়। পাকা তরমুজের ওজন তার আকারের চেয়ে বেশী হয় এবং ঠনঠন শব্দ করে।