কোমল পানীয় কে ইংরেজিতে বলা হয় Soft drink । ১৭শ দশকে পশ্চিমা বিশ্বে প্রথম কোমল পানীয়ের বাজারজাত শুরু হয়। সে সময় কার্বনসমৃদ্ধ পানি, সুগন্ধজাতীয় পদার্থ, চিনি, সোডিয়াম,পটাশিয়াম, লেবু ও মধুর সংমিশ্রণে তৈরি করা হতো এ এনার্জি ড্রিংকস। কালের বিবর্তনে এতে যোগ হয়েছে সিনথেটিক ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, অপিয়েট ও অন্যান্য উপাদান। তাই এসব ড্রিংকস কতটা ক্ষতিকর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরণের পানীয় ফরমালিনের চেয়ে কোনো অংশে কম ক্ষতিকর নয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এসব পানীয় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা বিপজ্জনক।

কোমল পানীয় পানের ক্ষতিকর দিকঃ

  • ৫০০ গ্রাম কোমল পানীয়তে ১৭০ ক্যালরি সোডা, ১৫ চামচ চিনি, বিষাক্ত ধাতু ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। যা লিভার সিরোসিস, টনসিলাইটিস, ফেরিংজাইটিস, ফুসফুসের নানা জটিল রোগ, ক্ষুধামন্দা, দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়, বন্ধ্যাত্ব, হার্ট অ্যাটাক, অবসাদ, ক্যান্সার, ওজন বেড়ে যাওয়া, অকাল বার্ধক্যসহ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
  • আমাদের শরীরে যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার মূল উপাদান হলো শ্বেত রক্তকনিকা অথচ এ পানীয় শ্বেত রক্তকণিকাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, যার ফলে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা  বেড়ে যায় অনেকগুণ।

  • অনেকের ধারণা এটি হজমে সাহায্য করে। কিন্তু মানব শরীরের খাবার হজমের জন্য ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন। অথচ কোমল পানীয় গ্রহণের সময় এর তাপমাত্রা থাকে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার খাবার পরপরই ফ্রিজ থেকে বের করে খাওয়া হয় তখন এটি হজমে সহায়তা তো দূরের কথা সেটি পাকস্থলীতে ধীরে ধীরে পঁচন ধরায়।
  • একদল সুইস বিজ্ঞানী ১৫ বছর ধরে গবেষণা করার পর বলেছেন, যারা নিয়মিত ৩০০ মিলিলিটার এনার্জি ড্রিংক পান করেন, তাদের অন্যান্য মানুষের তুলনায় মুত্রথলীতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা  ৪০ শতাংশ বেশি।

  • কোমল পানীয়গুলোতে এসপার্টেজ ও স্যাকারিনের উপস্থিতির কারণে মানুষের ব্রেইনের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
  • এতে আছে প্রিজারভেটিস নামক এক ধরণের কেমিক্যাল যা কিডনি ও লিভারকে নষ্ট করে দেয়।
  • কোমল পানীয়তে ব্যবহার করা রিফাইন সুগার মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
  • যুক্তরাষ্ট্রের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফ্রান্সিসকো কন্টারাইজ বলেন- অত্যাধিক সফট ড্রিংক পানের ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে আসে, যা মানব শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়! 

আরও পড়ুনঃ যে সুবিধা নিয়ে এলো 5 জি। জেনে নিন অজানা তথ্য

  • কোমল ড্রিংক পান করলে সাময়িক এনার্জি লেভেল ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। কিন্তু টাইপ-টু ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায় ১৮ শতাংশ।
  • অতিরিক্ত কোল্ড ড্রিংক পান করলে, শরীরের বিভিন্ন কোষগুলোতে কার্বনমনোঅক্সাইড  প্রবেশ করে। এতে পুরুষের প্রজনন ও নারীদের স্বাভাবিক গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

  • এসব পানীয়কে আকর্ষনীয় করতে বিষাক্ত রং ও ‘ফুড অ্যাডিটিভ’ ব্যবহার করা হয়, এগুলো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • গবেষণায় বলা হয়েছে এ জাতীয় পানীয় যত বেশি পান করা হয় আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি তত বেড়ে যায়। যারা মাসে ১ বার এরকম চিনি দ্বারা তৈরি পানীয় পান করেন তাদের চেয়ে যারা মাসে ৪ বার পর্যন্ত পান করে তাদের আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি ১ শতাংশ বেড়ে যায়। যারা সপ্তাহে ২-৬ বার পান করেন তাদের আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি ৬ শতাংশ বেড়ে যায়। যারা প্রতিদিন ১-২ বার পান করে্ন তাদের আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি ১৪ শতাংশ বেড়ে যায়। যারা ২ বারের বেশি পান করেন তাদের আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায় ২১ শতাংশ।
  • এ এনার্জি ড্রিংকগুলোতে ইথিলিন গ্লারাইকোল নামক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা প্রায় আর্সেনিকের মতই বিষাক্ত।

  • অতিমাত্রায় কোমল পানীয় শরীরে ক্যাফেইনের মাত্রা বাড়িয়ে ক্যাফেইন অ্যাডিকশন বা মাদকাসক্তি  বৃদ্ধি করে।
  • এতে থাকা সোডিয়াম বেনজোয়েট, ডিএনএ ধ্বংস করে হাইপার টেনশন বাড়িয়ে দেয়।
  • এ পানীয়গুলোতে রয়েছে শিসা ও ক্যাডমিয়াম যা মস্তিষ্ক স্নায়ুতন্ত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যার কারণে কোমা পর্যন্ত হতে পারে।
  • এসব পানীয়ে থাকা ফসফরিক অ্যাসিড মূত্রনালীর বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে মানবদেহে নানা  ধরণের প্রদাহ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয়।

জেনে রাখুনঃ

  • এইসব ড্রিংকস ফ্রিজ থেকে বের করে স্বাভাবিক তাপমত্রায় রাখলে ধাতব উপাদানের বিষক্রিয়া আরো বৃদ্ধি পায়।
  • কোমল পানীয়ে থাকা ৫টি বিষাক্ত ধাতুর নাম হলো- শিসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, ডাই প্যাথলেট ও অ্যান্টিমোনি।
  • এক চুমুক কোলা যদি ১ ঘণ্টা ধরে মুখের মধ্যে রাখা হয় দেখবেন দাঁতগুলো সব হলুদ হয়ে গেছে।
  • ১ গ্লাস কোকের মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে ১ টি দাঁত রেখে দিলে সপ্তাহ পর ঐ দাঁতের অস্তিত্ব থাকবে না।
  • লোহা জাতীয় দ্রব্যে জং ধরলে এবং কাপড়ে মাংসের ঝোল লাগলে কোমল পানীয় ব্যবহার করে দাগ সহজে দূর করা সম্ভব।
  • টয়লেট ক্লিনার হিসেবে কোক ঢেলে ১ ঘণ্টা পর ওয়াস করলে, অন্যান্য ক্লিনারের চেয়ে বেশি পরিষ্কার হবে।

পরামর্শঃ

  • অর্থ অপচয় না করে একই খরচে তাজা ফলের শরবত ও ডাবের পানি খেতে পারেন।
  • ভিন্ন স্বাদ পেতে চাইলে গ্রীন টি ও মসলা চা পান করার অভ্যাস করুন।
  • শিশুদের জীবন রক্ষার্থে এ পানীয় থেকে তাদেরকে দূরে রাখুন।

প্রতিটি মানুষের উচিত যেকোনো ধরণের কোমল পানীয় পরিহার করা। তাই বলা হয়, “কোমল পানীয় পান আর জেনে বুঝে বিষ পান একই”।

কোমল পানীয় কোমল পানীয় কোমল পানীয়