AI (Artificial Intelligence) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক চ্যাটবট অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (ChatGPT, Google Bard, Copilot, Other chatbots and apps) বর্তমান যুগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে। তথ্য খুঁজে পাওয়া, লেখা তৈরি, অংক করা, অনুবাদ করা, চিকিৎসা, আইন বিষয়ক ও অন্যান্য সহায়তার জন্য আমরা AI ব্যবহার করছি। এটি ব্যবহারের সময় ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করলে তা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজ আমরা AI কে যেসব তথ্য দিলেই আমাদের বিপদ হতে পারে, সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেসব তথ্য দিলেই হতে পারে বিপদ
১. ব্যক্তিগত পরিচয়সংক্রান্ত তথ্য (Personally Identifiable Information – PII)
- পুরো নাম, স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ, জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ও পাসপোর্ট নম্বর।
- মোবাইল ব্যাংকিং OTP (One-Time Password)।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকরির স্থান বা রুটিন।
- পিতামাতা বা আত্মীয়ের নাম ও ঠিকানা।
এই তথ্য চুরি হলে আইডেন্টিটি থেফ্ট বা প্রতারণার শিকার হতে পারেন।
২. আর্থিক তথ্য (Financial Information)
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর/ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের নম্বর, ইন্সুরেন্স তথ্য, মেয়াদ শেষের তারিখ, CVV, UPI ID ।
- বিকাশ/নগদ/রকেট একাউন্ট ও পিন নম্বর।
- অনলাইন ব্যাংক ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড।
এসব তথ্য শেয়ার করলে প্রতারণা বা অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকে।
৩. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য (Sensitive Health Data)
- রোগের ইতিহাস ও মেডিকেল রিপোর্ট ও ডকুমেন্ট।।
- ওষুধের বিবরণ, মানসিক স্বাস্থ্যের বিবরণ।
- ওষুধের ডোজ, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, ইন্সুরেন্স ক্লেইম।
এই তথ্যের অপব্যবহার করে কেউ আপনাকে মানসিক বা সামাজিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।
৪. কর্মস্থল বা ব্যবসায়িক গোপন তথ্য (Confidential or Corporate Data)
- কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ও গোপন ডকুমেন্ট, ট্রেড সিক্রেট, ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত তথ্য ও অপ্রকাশিত প্রকল্পের বিবরণ।
- ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি বা প্ল্যান।
এই তথ্য ফাঁস হলে কোম্পানির ক্ষতি হতে পারে এবং চাকরি হারানোর আশঙ্কা থাকে।
৫. সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেইল লগইন তথ্য (Social Media or Email Login Information)
- ফেসবুক, ইমেইল, গুগল, অনলাইন একাউন্টের ইউজারনেম/পাসওয়ার্ড।
- নিরাপত্তা প্রশ্নের উত্তর।
- 2FA কোড।
আপনার একাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে, এবং কেউ আপনার নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতে পারে।
৬. ছবি, ভিডিও, স্ক্যান ডকুমেন্ট বা ভয়েস রেকর্ড (Pictures, Videos, Scanned Documents or Voice Recordings)
- নিজের ছবি বা পরিবারের ছবি।
- জাতীয় পরিচয়পত্র, মেডিকেল রিপোর্ট, সনদপত্র স্ক্যান কপি।
- ভয়েস রেকর্ড।
এসব উপাত্ত দিয়ে deepfake বানিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করা বা প্রতারণা করা যেতে পারে।
৭. অবৈধ বা উসকানিমূলক কথা/তথ্য (Illegal or inflammatory speech/information)
- সহিংসতা, হুমকি, আত্মহত্যা বা সন্ত্রাস সম্পর্কিত আলোচনা।
- ঘৃণা বা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক মন্তব্য।
এসব তথ্য ব্যবহারে আপনি আইনগত সমস্যায় পড়তে পারেন, এমনকি পুলিশি ঝামেলাও হতে পারে।
৮. রাজনৈতিক/ধর্মীয়/লৈঙ্গিক মতামত ( Political/Religious/Sexual Views)
- সরকার বা নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা।
- লিঙ্গ বা যৌন অভিমত।
আইনি সমস্যা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা,পরিবার বা সমাজে হয়রান ও দেশভেদে জেল বা জরিমানা হতে পারে।
৯. পারিবারিক বা সম্পর্কের গোপনীয়তা (Family or Relationship Secrets)
- বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, পারিবারিক দ্বন্দ্ব।
- দত্তক নেওয়া বা গোপন সন্তানের তথ্য।
সম্পর্কে টানাপোড়েন, বিবাহ বা সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হতে পারে।
১০. লোকেশন ও ট্রাভেল প্ল্যান (Location and Travel Plans)
- বর্তমান লোকেশন, ভবিষ্যত ভ্রমণের সময়সূচি।
- বাসা/অফিসের সিকিউরিটি সিস্টেমের বিবরণ।
বাসায় ডাকাতি, অপহরণ ও শারীরিক আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১১. AI-কে অনৈতিক কাজে ব্যবহার (Using AI for Unethical Purposes)
- হ্যাকিং, ডিপফেক ভিডিও বানানোর নির্দেশনা চাওয়া।
- কারো সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য তৈরি করতে বলা।
আইনি জবাবদিহিতা ও সাইবার ক্রাইম আইনে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
কী করবেন না: সংক্ষিপ্ত তালিকা
কখনো শেয়ার করবেন না | কেন শেয়ার করবেন না |
পাসওয়ার্ড/OTP | একাউন্ট হ্যাক হতে পারে |
NID/পাসপোর্ট/ঠিকানা | পরিচয় চুরি হতে পারে |
ব্যাংক তথ্য | টাকা চুরি হতে পারে |
ছবি/ডকুমেন্ট | deepfake বা প্রতারণা হতে পারে |
গোপন অফিস তথ্য | চাকরি বা ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে |
অবৈধ/সহিংস তথ্য | আইনগত ঝামেলা হতে পারে |
যদি তথ্য ফাঁস হয়ে যায়? জরুরি পদক্ষেপ
- দ্রুত সকল অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
- নতুন কার্ড ইস্যু করতে ব্যাংক বা কোম্পানিকে জানান।
- সাইবার ক্রাইম ইউনিটে রিপোর্ট করুন।
আরও পড়ুনঃ
মারাত্মক বিপদ থেকে বাঁচতে হেডফোন যেভাবে ব্যবহার করবেন
অভ্র কিবোর্ড দিয়ে বাংলা লেখার সহজ নিয়ম
নিরাপদ ব্যবহারের পরামর্শ
- শুধু শিক্ষা, তথ্য বা সাধারণ সহায়তা চেয়ে প্রশ্ন করুন।
- কখনো পাসওয়ার্ড, পরিচয় বা আর্থিক তথ্য লিখবেন না।
- নিজের বা অন্যের গোপন তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
- নিজের পরিচয় গোপন রাখুন (যদি না বলা বাধ্যতামূলক হয়)।
- সন্দেহ হলে, কিছু শেয়ার করার আগে ভাবুন।
- ভার্চুয়াল কার্ড/মাস্কড ইমেইল ব্যবহার করুন।
- একবার দেওয়া তথ্য ফেরত নেওয়া যায় না, তাই শেয়ার করার আগে দুবার চিন্তা করুন।
সতর্কতা
- AI-কে কখনই Real-time লোকেশন, নিরাপত্তা কোড, বা গোপন আলোচনা শেয়ার করবেন না।
- AI-এর উত্তরকে সরাসরি বিশ্বাস না করে ক্রস-চেক করুন (বিশেষ করে স্বাস্থ্য, আইনি বা আর্থিক বিষয়ে)।
- পরিচয় গোপন রাখুন। প্রয়োজনে ছদ্মনাম ব্যবহার করুন।
- AI ব্যবহার করার সময় কোন ধরনের তথ্য শেয়ার করা একেবারেই অনুচিত বা বিপজ্জনক, সে বিষয়ে সজাগ থাকা খুবই জরুরি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা