১৯৩৭ সালে নানকিং বর্তমানে নানজিং এ অসংখ্য চীনাদেরকে হত্যা করেছিলো জাপানীরা। খুন ধর্ষণসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি। জাপানীরা এর আগে পরেও লাখে লাখে মরেছে-মেরেছে। The flowers of war নামে একটি মর্মস্পর্শী মুভি আছে এই গণহত্যা নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান বাধ্য হয়েই রক্তের নেশা ছেড়ে জাতি গঠনে মনোযোগ দিয়েছিলো বলেই আজ তারা পৃথিবীর অন্যতম সভ্য জাতিতে পরিণত হতে পেরেছে। আসুন জেনেনিই কেন জাপানীরা বাঙ্গালীদেরকে ভালোবাসে?
কেন জাপানীরা বাঙ্গালীদেরকে ভালোবাসে
জাতি গঠনের পিছনে জাপানীরা চিরকৃতজ্ঞ কুষ্টিয়ায় জন্ম নেয়া বাঙ্গালী বিচারপতি ডঃ রাধা বিনোদ পাল এর কাছে। মিত্রপক্ষের চাপ সত্বেও ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধ টাইব্যুনালের ‘টোকিও ট্রায়াল’ ফেজে এই বাঙালি বিচারকের দৃঢ় অবস্থানের কারণেই জাপান অনেক কম ক্ষতিপূরণের উপরে বেঁচে গিয়েছিলো। নয়তো যে ক্ষতিপূরণের বোঝা মিত্রপক্ষ ও অন্য বিচারকরা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার দায় এখন পর্যন্ত টানতে হতো জাপানকে। সেক্ষেত্রে ঋণের বোঝা কারণে জাতি গঠনের সুযোগই আর পাওয়া হতোনা জাপানের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪৬-৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাপানের রাজধানী টোকিও মহানগরে জাপানকে নানচিং গণহত্যাসহ চীন-জাপান যুদ্ধে চীনাদের উপর জাপানী সেনাবাহিনীর দীর্ঘ কয়েক দশকের নৃশংসতার অভিযোগে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করে যে বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হয়, বিচারপতি ডঃ রাধা বিনোদ পাল ছিলেন সেই আদালতের অন্যতম বিচারপতি। তিনি তাঁর ৮০০ পৃষ্ঠার বিচক্ষণ রায় দিয়ে জাপানকে “যুদ্ধাপরাধ”-এর অভিযোগ থেকে মুক্ত করেন।
এ রায় বিশ্বনন্দিত ঐতিহাসিক রায়ের মর্যাদা লাভ করে। তার এ রায় জাপানকে সহিংসতার দীর্ঘ পরম্পরা ত্যাগ করে সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশে প্রধানতম সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।
পরবর্তীকালে, জাপানী সম্রাট হিরোহিতো নিজে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেছিলেন, “যতদিন জাপান থাকবে বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবেনা। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নি:স্বার্থ বন্ধু।” এটি যে শুধু কথার কথা ছিলোনা তার প্রমাণ আমরা এখনো দেখতে পাই। জাপান এখনো বাংলাদেশের সবচে নি:স্বার্থ বন্ধু। এই ঘটনার প্রায় ৬৫ বছর পর ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিসান হামলায় প্রাণ গেলো নয় জাপানিজ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের। জাপান তখনও পাশে ছিলো বাংলাদেশের।
ডঃ রাধা বিনোদ পাল এর নাম এখনো জাপানী পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। জাপান সম্রাট হিরোহিতোর কাছ থেকে জাপানের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পদক ‘কোক্কা কুনশোও’ গ্রহণ করেছিলেন। জাপানের রাজধানী টোকিও তে তার নামে রাস্তা রয়েছে। কিয়োটো শহরে তাঁর নামে রয়েছে জাদুঘর, রাস্তার নামকরণ ও স্ট্যাচু। জাপান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। তিনি আইন সম্পর্কিত বহু গ্রন্থের রচয়িতা।
আরও পড়ুন, হিটলার সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।
Nc subjects
লেখাটি থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। লেখক কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।