ব্রণ কে ইংরেজিতে বলা হয় Acne.  বয়ঃসন্ধিকালে যেকোনো ধরণের ত্বকে ব্রণ দেখা দিতে পারে। প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামের এক ধরণের জীবাণুকে এর জন্য দায়ী করা হয়। ব্রণ হলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে দৌড়ান। আবার অনেকে দামি ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু হাতের কাছেই রয়েছে এমন অনেক উপাদান, যা দিয়ে অতি সহজে ব্রণের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

ব্রণ ও ব্রণের দাগঃ

  • সামান্য সরিষা গুঁড়ার সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ দূর হওয়ার পাশাপাশি ব্রণের দাগও দূর হবে।
  • ব্রণ দূর করতে আলুর রসে কিছুটা গ্লিসারিন মিশিয়ে আলতো করে সারা মুখে ম্যাসাজ করুন ভালোভাবে। ২০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করার পর মুখ শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে এটি সপ্তাহে অন্তত দুদিন ব্যবহার করুন।
  • ১০০ গ্রাম নিমপাতা ১ লিটার পানিতে ফুটিয়ে আধা লিটার করে ছেঁকে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখতে হবে। দিনে ৩ থেকে ৪ বার তুলা দিয়ে মুখে লাগালে উপকার পাবেন।
  • নিমপাতা, তুলসিপাতা, মুলতানি মাটি, অল্প পরিমাণ কর্পূর, লবঙ্গ ও চন্দন মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।
  • একটি ডিমের সাদা অংশটি ভালো করে ফেটিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, আধা চা চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে নিন। চোখ ও ঠোট বাদ দিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • প্রথমে নিমপাতা ফুটানো পানি ঠান্ডা করে মুখ ধুয়ে নিন। পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে কয়েক মিনিট বরফ ঘষুন। দাগের জন্য টক দই, কেওলিন পাউডার এবং লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

  • একটি বরফের টুকরোকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে কয়েক মিনিট ব্রণের ওপর রাখুন। বরফ সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। পাঁচ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার ব্যবহার করুন।
  • এক কাপ পানিতে এক চা-চামচ গ্রিন টি দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। নির্যাস বের হলে এতে কিছু লবঙ্গ দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। বানানো পেস্ট ব্রণে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩-৪ বার করে, কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করলে ব্রণ চলে যাবে।
  • শসার রস মুখে ব্রণ দূর করতে খুবই কার্যকর। এ ছাড়া স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে এর সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিলেই হবে। যাদের মধুতে অ্যালার্জি নেই, তারা সামান্য মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন এই মিশ্রণে। সপ্তাহে দুদিন এই প্যাক ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
  • ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া, ১ চা চামচ জয়ফল গুঁড়া এবং গ্রীন টির গুঁড়া ভালোভাবে মিশ্রণ করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের কালো দাগ দূর হবে।
  • তুলসি পাতার রস ব্রণ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • এক-দুই কোয়া রসুন দুই টুকরা করে কেটে নিন। তারপর ব্রণের জায়গায় রসটা লাগান। মিনট পাঁচেক পরে ধুয়ে ফেলুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এটা করলে পরদিন সকালে ত্বকের উন্নতি টের পাবেন।

  • পুদিনা পাতা ১ চা চামচ, দারুচিনি ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মধু ১ চা চামচ দিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ৩/৪ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি কয়েক দিন ব্যবহারের করলেই ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ এবং চন্দন কাঠের গুঁড়া একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। মিশ্রণটি  ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণ দূর করার কাজ করে না বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
  • দারুচিনি গুঁড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি, দাগ এবং ব্যথা কমে যাবে।
  • অ্যালোভেরার জেল, কাঁচা দুধ ও হলুদ গুঁড়া একত্রে  মিশিয়ে হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বকের কোমলতা বাড়বে এবং মুখের ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন।
  • মসুরির ডাল আর চাল ভিজিয়ে ভালো করে পিষে নিন। চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিলিয়ে নিন। এই মিশ্রণের মধ্যে দুই চামচ দুধও মিশিয়ে নিতে পারেন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে নিন। এই প্যাকটা নিয়মিত মুখে লাগান। ব্রণের সাথে ব্রণের দাগও দূর হয়ে যাবে।

ব্রণের ক্ষতঃ

  • ব্রণের ক্ষত রোধ করতে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ভিটামিন ‘ই’। ভিটামিন ‘ই’ ব্রণের গর্তে যাদুর মত কাজ করে। প্রতিদিন ময়শ্চারাইযার হিসেবে ভিটামিন ই -ক্যাপসুল ত্বকে ব্যবহার করুন। ভিটামিন ই-ক্যাপসুল ত্বকের ক্ষত দাগ তো দূর করেই সাথে ব্রণও রোধ করে।
  • পরিমাণ মতো চিনি নিয়ে তাতে সামান্য অলিভ ওয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর ত্বকে হালকা ম্যাসেজ করুন। ১০/১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ২/৩ বার ত্বকে চিনির এই পেস্ট ব্যবহার করুন। ব্রণের দাগ ক্ষত দূর হবে।
  • আলুর রস ক্ষততে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এইভাবে ত্বকে আলুর রস ব্যবহার করুন ভালো ফল পাওয়া যাবে।
  • পাতলা কাপড় বা তুলোতে একটা বরফের টু্করো নিয়ে গর্তের জায়গায় ১৫-২০ মিনিট ঘষে লাগান। এতে ত্বকে আরামদায়ক অনুভুতির পাশাপাশি সারিয়ে দেবে গর্তের দাগ।
  • অ্যালোভেরা জেল প্রকৃতির আশীর্বাদ স্বরূপ। টাটকা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা অ্যালোসিন নামক উপাদান ব্রণের ক্ষত কমাতে কাজ করে। সপ্তাহে কয়েকবার ব্যবহার করুন।

পরামর্শঃ

  • কখনোই ব্রণ স্পর্শ ও নখ দিয়ে খোঁচাখুঁচি করা যাবে না।
  • পর্যাপ্ত ফলমূল খাবেন।
  • প্রচুর পানি পান ও করুন।
  • দৈনিক কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাবেন।
  • স্মার্টফোণ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন।
  • দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে চেষ্টা করুন।
  • ঠান্ডা পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
  • সাবান ব্যবহার না করে ভালো কোম্পানির ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।
  • ঝাল, মশলা ও তৈলাক্ত খাবার বর্জন করুন।  
  • সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এড়িয়ে চলুন।
  • বাইরের ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া বন্ধ করুন।
  • ব্রণ না যাওয়া পর্যন্ত মেক-আপ ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করবেন না।

আরও পড়ুন, রাসায়নিক হেয়ারডাই ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ভাবে চুল কালো করার উপায়।