হতে পারে অন্ধত্বঃ
যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন- মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে দৃষ্টির বৈকল্য সৃষ্টি হতে পারে। দৈনিক কিছু সময় মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তারা। আমেরিকান ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের নীল আলো রেটিনার স্থায়ী ক্ষতি করে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাতঃ
স্মার্ট ফোনের নীল আলো শরীরে মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে যারা স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ঘুম কমে যেতে পারে। প্রতিরাতে মানুষের ৭/৮ ঘন্টার পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
শ্রবণ দুর্বলতাঃ
মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শ্রবণ শক্তি পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কানের সমস্যা তৈরির বিষয়টি অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। হেডফোন ব্যবহার করে উচ্চশব্দে গান শুনলে অন্তকর্ণের কোষগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে এবং মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক আচরণ করে। একসময় বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ত্বক ও চেহারা শ্রীহীন হওয়াঃ
মার্কিন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জিন ওবাগি বলেছেন, মোবাইল ফোনের ত্বড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণে শরীরবৃত্তীয় ক্ষতি হয়; ফলে ত্বক কুঁচকে যায় এবং চেহারা ক্রমাগত শ্রীহীন হতে থাকে।
মেরুদন্ডে বাড়তি চাপঃ
মোবাইল স্ক্রিন দেখতে নিচে তাকিয়ে থাকার কারণে ঘাড়ে যে ব্যাথা অনুভূত হয়, তা আইপশ্চার নামে পরিচিত। আমাদের মাথার ভর ১০ থেকে ১২ পাউন্ড এবং লম্বা সময় ধরে এটি একটি দিকে রাখলে মেরুদন্ডে বাড়তি ভরের চাপ প্রয়োগ করে। যেমন, ১৫ ডিগ্রী বাঁকানো মাথা ঘাড়ের উপর ভর বাড়িয়ে দেয় ২৭ পাউন্ডের। ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘টেক্সটনেক’ নামের এই সমস্যা আরও ছড়িয়ে যেতে পারে।
অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতিঃ
বেশি সময় ধরে মেসেজ টাইপ করা হলে আঙুলের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হতে পারে এবং অবস্থা বেশি খারাপ হলে আর্থরাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও অনেকে কাজের সময় মুঠোফোন ব্যবহার করতে গিয়ে কাঁধ ও কানের মাঝে ফোন রেখে কথা বলেন। বসার ভঙ্গির কারণেও শরীরে নানা অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
ওজন বেড়ে যায়ঃ
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সিমন বলিভার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ১০৬০ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর গবেষণা চালিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। এর মধ্যে ৭০০ নারী ও ৩৬০ জন পুরুষ। গবেষণাটিতে অংশ নেয়া মেয়েদের গড় বয়স ছিল ১৯ ও ছেলেদের ২০ বছর। এর মধ্যে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ছেলের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে এবং ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ ছেলের মধ্যে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অন্যদিকে মেয়েদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশের ওজন বেড়ে যাওয়া এবং ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশের অতিরিক্ত মোটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে।
আঙুল ও কব্জির সমস্যাঃ
ব্রিটেনের হ্যান্ড ও এলবো সার্জন রজার পাওয়েল ও তার সহযোগীদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, যারা দু’ঘন্টার বেশি সময় ধরে মোবাইলে টেক্সট করেন, তাদের ‘টেক্সট ক্ল’ এবং ‘সেল ফোন এলবো’ নামে আঙুল ও কব্জির সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যার নাম ‘কিউবিটাল টানেল সিনড্রোম’।
ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ
মোবাইল ফোন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ছড়ায়, যা কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
হতাশা ও উদ্বেগের কারণঃ
দক্ষিণ কোরিয়ার রেডিওলজির অধ্যাপক ইয়ুং সুক এক গবেষণায় অভিমত দিয়েছেন, যেসব কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোনে বেশি সময় কাটায় তাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে; যা দেখে বুঝা যায় তাদের এ বিষয়ে আসক্তি রয়েছে। এর ফলে তাদের মাঝে হতাশা ও উদ্বেগ কাজ করে।
পুরুষের প্রজনন সমস্যাঃ
গবেষকেরা জানান, মোবাইল ফোন থেকে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়। এই ক্ষতিকর তরঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কে ক্যান্সারের যোগসূত্র থাকতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্য কোষকলা এই তরঙ্গের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ক্ষতির আশংকা রয়েছে পুরুষের প্রজননতন্ত্রেরও।
চোখের জল শুকিয়ে যাওয়াঃ
রাতের অন্ধকারে মোবাইলের আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে অনিদ্রার ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে চোখের জল শুকিয়ে গিয়ে চোখের সংক্রমণ হতে পারে।
হার্টের সমস্যাঃ
মোবাইলের ক্ষতিকর রশ্মি উচ্চ রক্তচাপ, অ্যানজাইনা, তীব্র মাথাধরাসহ হার্টের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্রেন টিউমারঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মোবাইল থেকে নির্গত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ব্রেন টিউমারের সবচেয়ে বড় কারণ। যা বড়দের তুলনায় ছোটদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। কেননা শিশুদের খুলির বাইরের অংশ বড়দের তুলনায় পাতলা হয়। রেডিয়েশনের প্রভাব তাদের মাথায় বেশি পড়ে। আর এভাবে শিশুরা চরম হুমকির মুখে; যা অদূরভবিষ্যতে জাতীয় জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
ব্রেন ক্যান্সারঃ
সম্প্রতি সুইডেনের একটি গবেষণায় জানা গেছে, ২০ বছরের নিচে যেসব কিশোর স্মার্টফোনে আসক্ত, তাদের ব্রেন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় ৫ গুণ বেশি।
নৈতিক অবক্ষয়ঃ
বর্তমানে বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী অনলাইন গেমসে আসক্ত। তারা দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে ভার্চুয়াল জগতে। এতে তাদের মাঝে নেতৃত্বগুণ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা ও নিয়মশৃঙ্খলা লোপ পেয়ে নৈতিক ও সামাজিক জীবনযাপন থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
মোবাইল ফোনের নিরাপদ ব্যবহারে যে বিষগুলো মেনে চলা জরুরী
- ১৬ বছরের কম বয়সের শিশুদের মোবাইল ফোন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- মোবাইল ব্যবহারের সময় সব আঙুল পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করুন।
- ফোন সামনের পকেটে রাখলে হার্টের ক্ষতি হতে পারে। কারণ ফোন থেকে যে রেডিয়েশন বের হয় তা হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়া ফোন সামনের পকেটে রাখলে পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়।
- প্যান্টের পেছনের পকেটে ফোন রাখার কারণে বেড়ে যেতে পারে আপনার পায়ের ব্যথা।
- মোবাইল পকেটে না রেখে ব্যাগে রাখুন।
- ফোনে কথা বলার সময় লাউড স্পিকার বা হেডফোনের ব্যবহার করুন।
- আপনার মোবাইল ফোনগুলি আপনার সাথে নিরাপদে রাখুন এবং রাতে আপনার শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। শিশুরা আপনার অবর্তমানে চুপচাপ এটিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারে।
- শিশুরা ফোন নিয়ে খেলা করলে তাদের হাইপারঅ্যাকটিভিটি, ডিফিসিট ডিসঅর্ডার-এর মতো নানা অসুখ দেখা দিতে পারে।
- গাড়ি চালাতে চালাতে অথবা রাস্তা পার হতে গিয়ে কখনও মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়।
- রান্নাঘর বা আগুনের কাছাকাছি ফোন রাখলে ফোন ব্লাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আগুন থেকে দূরে রাখুন।
- ফোনে লো ব্যাটারি থাকলে কথা না বলাই ভালো।
- চার্জ দেয়ার সময় ফোন বন্ধ রাখুন।
আরও পড়ুন, বজ্রপাত থেকে বাঁচবেন কিভাবে? জেনে নিন সুরক্ষার কৌশল।