মধু অনেকের কাছেই প্রাকৃতিক অ্যানার্জি বুস্টার হিসেবে পরিচিত। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন, জিংক, সুক্রোজ, ফ্রুকটোজ, খনিজ, আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৪৫ টি খাদ্য উপাদান। যা শরীরের ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন প্রতিরোধ করতে সক্ষম। অনেকেই ওজন কমাতে এবং চিনির বিকল্প হিসেবে এটি খান। তবে মধুর নানা ধরণের পুস্টি গুণ থাকা সত্বেও অনেকের জন্য এটি হতে পারে বিপদের কারণ।
যারা মধু খাবেন না
- যারা ওজন কমাতে মধু খান, তারা পানি ও লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া উচিত। তা না হলে ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা এটি এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা না থাকলেও বেশি খেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- অধিক পরিমাণে খেলে মধুতে থাকা এসিড দাঁতের এনামেল নষ্ট করে ক্যাভিট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যাদের দাঁতের সমস্যা রয়ছে তারা এটি খেতে সতর্ক থাকতে হবে।
- যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা এটি এড়িয়ে চলা উত্তম। যদি প্রয়োজনে খেতে হয় তাহলে কম পরিমাণে খেতে হবে। বেশি পরিমাণ খেলে অন্ত্রের উপর চাপ পরে।
- ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু দেওয়া উচিত নয়। কারণ মধুতে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার স্পোর থাকতে পারে। যা অল্প বয়স্ক শিশুদের বিরল কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধু খাওয়া সীমিত করতে হতে হবে। এতে ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে, যা বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- মধুতে বিভিন্ন গাছের পরাগ থাকতে পারে। যারা পরাগ থেকে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত, তাদের এটি খাওয়ার পর চুলকানি ও আমবাতের মতো লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে।
- মধু খাওয়ার পর কিছু লোক হজমের সমস্যা যেমন ব্লাটিং, গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে। তাই এ ধরণের ব্যক্তিদের এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
- হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস-এর মতো শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধু খেলে শ্বাসযন্ত্রের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে।
- লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এটি খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মধুতে শর্করা অ্যালকোহল রয়েছে, যা লিভারে অতিরিক্ত চাপ দিতে পারে এবং এর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বিমান সম্পর্কিত অজানা তথ্য
- অস্ত্রোপাচারের আগে এটি সেবন সাময়িকভাবে এড়ানোর প্রয়োজন। কারণ অস্ত্রোপচার চলাকালীন অ্যানেস্থেশিয়া বা ওষুধের সাথে মধুর মিথস্ক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা
- যাদের কিডনিতে পাথরের ইতিহাস রয়েছে বা কিডনির কার্যকারিতা বিঘ্নিত, তাদের মধু খাওয়া সীমিত করতে হবে।
- ফেনাইলকেটোনুরিয়া হল একটি বিরল জেনেটিক ব্যাধি যা ফেনাইল্যালানিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডকে ভেঙে ফেলার জন্য শরীরের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। তাই কিছু মধুতে ফেনিল্যালানিন থাকা্র কারণে ফেনাইলকেটোনুরিয়া আক্রান্ত রোগিরা এটি এড়িয়ে যেতে হবে।
জেনে রাখুন
- প্রতিদিন সকালে ১-২ চা চামুচ মধু খাওয়ার অভ্যাস করা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি।
- একজন সুস্থ ব্যক্তির দিনে ১০ চা চামচের বেশি মধু খাওয়া উচিত নয়।
- ফুটন্ত পানি বা দুধে মধু মিশানো যাবে না। পানি ও দুধ পানযোগ্য তাপমাত্রায় আসলে মিশাতে পারেন।
- রান্নার সময় সরাসরি মধু মিশানো যাবে না। খাবার এটি মিশিয়ে মিষ্টি করতে হলে রান্না শেষ হওয়ার পর মিশিয়ে নিন।
- জন্মের পর অনেক বাচ্চাকে মধু খেতে দেওয়া হয়, সেটা কোনোভাবেই করা যাবে না।