রক্তদান এর ইংরেজি হলো Blood Donation. নিজের রক্ত অন্য কারো প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় দান করাকে রক্তদান বলা হয়। প্রতি ৩ মাস পর পর প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নারী-পুরুষ নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে রক্তদান করতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যে কোনো ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। বরং রক্তদানের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসা বিজ্ঞান এ পর্যন্ত রক্তের কোন বিকল্প বা কৃত্তিম কোনো রক্ত তৈরি করার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই বলা যেতে পারে, রক্তদান পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ ও শ্রেষ্ঠ উপহার।
রক্তদান করার উপকারিতা
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ রক্তদান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। রক্তদানের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, অন্ত্রের ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
- হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়ঃ যারা নিয়মিত রক্তদান করেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
- কোলেস্টরলের মাত্রা কমেঃ নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায় এবং লিপিড ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস পায়।
- লিভার ভালো থাকেঃ নিয়মিত রক্তদানের কারণে লিভার সুরক্ষা হয়। হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং হেপাটাইটিস ‘ই’ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- রক্তকণিকা তৈরি হয়ঃ রক্ত দেয়ার ফলে শরীরের অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং ২ সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে তৈরি হয় নতুন রক্তকণিকা। তাই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
- আয়রনের সঠিক মাত্রা বজায় থাকেঃ ৩ মাস পর পর রক্ত দেয়ার ফলে রক্তের প্রবাহ সঠিক থাকে। ফলে শরীরে আয়রনের সঠিক মাত্রা বজায় থাকে।
- বার্ধক্যের ঝুঁকি কমায়ঃ রক্তদান মানসিক চাপ মুক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে তাড়াতাড়ি বয়ষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ রক্তদান করলে অতিরিক্ত ওজন কমে যায়। নিয়মিত রক্তদান ৬৫০ ক্যালোরি পর্যন্ত মেদ কমাতে সহায়তা করে।
- হোমোক্রোমাটোসিসে রোগের সম্ভাবনা কমেঃ নিয়মিত রক্তদান করলে হোমোক্রোমাটোসিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকেঃ যারা বছরে ৩ বার রক্তদান করেন তাদের শরীরের ভারসাম্যতা ঠিক থাকে।
- নীরোগ ও সুস্থ থাকা যায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত রক্তদান করেন তারা নীরোগ ও সুস্থ থাকেন।
- ত্বক কুঁচকে হয়ে যাওয়া রোধ করেঃ রক্তদানের ফলে শরীরের ত্বক বেশি বয়স পর্যন্ত ঝকঝকে ও তরতাজা থাকে। যার ফলে ত্বক কুঁচকে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।
রক্ত দেয়ার আগে করণীয়
- রক্ত দেয়ার আগে প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেয়ে নিন।
- রক্ত দেয়ার ২ দিনের মধ্যে মাথা ব্যথার কোনো ঔষধ খাবেন না।
- শরীর অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে।
- রক্ত দেয়ার আগে তৈলাক্ত কিছু খাবেন না।
- রক্তদানের আগের রাতে ভালো করে ঘুমিয়ে নিতে হবে।
রক্ত দেয়ার পর করণীয়
- রক্তদানের পর হঠাৎ দাঁড়ালে মাথা ঘোরাতে পারে তাই কিছু সময় শুয়ে থাকুন।
- রক্তদানের পর ঘামাতে থাকলে স্যালাইন খেতে পারেন।
- হাতে লাগানো ব্যান্ডেজ কয়েক ঘণ্টা পর খুলুন।
- রক্ত দেয়ার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না।
- রক্ত দেয়ার পর ৩-৪ গ্লাস পানি পান করুন।
- যেদিন রক্ত দেবেন ঐদিন ভারী কোনো জিনিস বহন করা থেকে বিরত থাকুন।
- কিছুদিন কম পরিশ্রম করুন ও বিশ্রাম নিন।
- রক্ত দেয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় গ্রহণ করবেন না।
- প্রচুর পুষ্টিকর ও তরল খাবার খাবেন।
- রক্ত দেয়ার পর তিন মাস না যেতে কোনোভাবেই পুনরায় রক্ত দেয়া যাবে না।
কে কাকে ও কার কাছ থেকে রক্ত দিতে এবং নিতে পারবে
যে কারণগুলো উপস্থিত থাকলে রক্তদান করা যাবে না
- বয়স ১৮ বছরের নীচে ও ৫৫ বছরের উপরে হলে রক্ত দেয়া যাবে না।
- যাদের ৩ বছরের মধ্যে জন্ডিস হয়েছে তারা রক্ত দিতে পারবে না।
- এইচআইভি শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবে না।
- জ্বর, সর্দি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, গলা ব্যথা ও অন্য ভাইরাস সংক্রমন জনিত রোগে ভুগলে রক্তদান করা যাবে না।
- হাঁপানি রোগীর ইনহেলার ও নিয়মিত ঔষধ সেবন করলে রক্ত দিতে পারবে না।
- ক্যান্সার, সিফিলিস, ডায়বেটিস, বাতজ্বর, হৃদরোগ, করোনা ও চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবে না।
- ৬ মাসের মধ্যে বড় কোন অস্ত্রপচার হলে রক্ত দেয়া যাবে না।
- যাদের রক্ত বাহিত জটিল কোন রোগ রয়েছে তারা রক্ত দিতে পারবে না।
- দাঁতের ছোট চিকিৎসার পর ২৪ ঘণ্টা এবং বড় ধরনের চিকিৎসার পর এক মাস অপেক্ষা না করে রক্তদান করা যাবে না।
- শরীরের কোনো গ্ল্যান্ড ফুলে থাকলে রক্তদান করা যাবে না।
- যেসব নারীদের ঋতুস্রাব চলছে ও গর্ভবতী মহিলারা রক্ত দিতে পারবে না।
- সম্প্রতি ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা ভ্রমণ করলে রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মাদক গ্রহণ করে রক্তদান করা যাবা না।
- শরীরের ওজন কমপক্ষে পুরুষের ৫০ কেজি এবং মহিলাদের ৪৫ কেজি না হলে রক্তদান করা যাবে না।
- ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত অবস্থায় রক্ত দেয়া যাবে না।
- সন্তান জম্ম দেয়ার ১ বছরের মধ্যে রক্তদান করা যাবে না।
- ন্যূনতম পুরুষদের জন্য ১৪ গ্রাম/ডিএল এবং ১৩ গ্রাম/ডিএল পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকলে রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কোন ব্যক্তি টিকা গ্রহণ করলে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তদান করতে পারবে না।
জেনে রাখুন
- ১ ব্যাগ রক্ত দিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না।
- রক্ত দেয়ার ৫- ২১ দিনের মধ্যে শরীরে রক্তের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
- হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং হেপাটাইটিস ‘ই’ থেকে সুস্থ হওয়ার ৬ মাস পর রক্ত দেয়া যাবে।
- কারো যক্ষ্মা রোগ হলে পুরো ওষুধ সেবন করার ২ বছর পর রক্তদান করা যাবে।
- এন্টিবায়োটিক ঔষধের কোর্স চলাকালীন সময়ে রক্ত দেয়া যাবে না। তবে সেবনের কমপক্ষে ১ সপ্তাহ পর রক্ত দেয়া যাবে।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া অবস্থায় রক্ত দেওয়া যাবে।
- কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তর পুরোপুরি সুস্থতা নিশ্চিত হলে এবং পরবর্তী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে, ২ সপ্তাহ পরে রক্ত দিতে পারবে।
- সর্দি-জ্বর অথবা ভাইরাস জনিত রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে ৭ দিন পর রক্ত দেয়া যাবে।
- রক্তদানের পর বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা দেখা দিতে পারে। এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই, কয়েক মিনিট পর এ সমস্যা থকবে না।
- রক্ত দেয়ার সময় কোনো ধরণের মানসিক চাপ অনুভব করা যাবে না।
- রক্তদান করলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ প্রতিবার ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দেয়া হয়, কিন্তু প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে ৪ -৬ লিটার রক্ত থাকে।
পরামর্শ
- রক্ত দেয়ার আগে হালকা খাবার খেয়ে নিবেন, কখনো খালি পেটে রক্ত দিবেন না।
- রক্ত দেয়ার সময় ব্যবহার করা সূচ সিরিঞ্জ জীবাণু মুক্ত কি না অবশ্যই জেনে নিন।
- আপনার পরিচিত ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে রক্ত দিন।
- পেটভরে খাওয়ার ৩০-৬০ মিনিট পর রক্ত দেয়া উত্তম।
- কোনো কারণে নিজেকে অসুস্থ মনে হলে, সে দিন রক্ত দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
আরও পড়ুন, দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা ,হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ।
Excellent read, I just passed this onto a colleague who was doing some research on that. Milena Free Menis
Thank you for bringing this wonderful artist to my attention. Catriona Baldwin Brenda