Spread the love

শিশুদের অনেক সময় ধরে স্কুলে থাকতে হয়। স্কুলে যাতে তাদের পুষ্টির চাহিদার কোনো ঘাটতি না হয় সে জন্য বাসা থেকে পুষ্টিকর টিফিন নিশ্চিত করতে হবে। অনেক ছাত্রছাত্রী স্কুলে যাওয়ার আগে তাড়াহুড়োর কারণে ভালোভাবে নাস্তা খেয়ে যেতে পারে না। তাই স্কুলে কী ধরণের টিফিন দেওয়া যায় সে জন্য মায়েরা খুবই উদ্বিগ্ন থাকেন। শিশুদের জন্য এমন  টিফিন তৈরি করতে হবে, যাতে শিশুরা পুষ্টির পাশাপাশি  আনন্দও পায়। শিশুদের নিয়মিত বাসা থেকে সকালের নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস করা। জরুরী। বাজার থেকে কেনা খাবার, শিশুদের শারীরিক অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই ঘরের টিফিন শিশুদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।

শিশুদের স্কুলের নাস্তা যে রকম  হওয়া উচিতঃ

  • শিশুরা স্কুলে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে হাতে বানানো রুটি, সবজি, ডিম, হালুয়া ও দুধ দিয়ে নাস্তা খাইয়ে স্কুলে পাঠানো উচিত।
  •  চর্বি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেড এ তিনটি প্রধান পুষ্টি খাদ্যে যাতে উপস্থিত থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
  • বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য শর্করা ও আমিষ নাস্তায় সমপরিমাণে রাখতে হবে।
  • শিশুকে একই ধরনের খাবার বার বার দিবেন না। তাহলে শিশু খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
  • টিফিনের খাবার যেনো নরম ও সতেজ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • টিফিনে ফলমূলের অগ্রাধিকার দিন। আপেল, আম, বরই, কামরাঙা, পেয়ারা, কলা, কমলা, স্ট্রবেরি, আঙ্গুর, মাল্টা, আনার ও মৌসুমী ফল ইত্যাদি টিফিনে রাখতে পারেন।
  • শিশুদেরকে শুকনো ও সহজে বহনযোগ্য খাবার দিন। স্কুলে খেতে অসুবিধা হবে এমন খাবার দেয়া যাবে না।
  • শিশুরা ঝোল জাতীয় খাবার পছন্দ করে না, তাই এ ধরণের খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • টিফিনে দুধ-ডিম দিয়ে তৈরি সুস্বাদু পুডিং অথবা নুডল্‌সও দেওয়া যেতে পারে।
  • শিশুদের জন্য মুরগির বুকের মাংস, ডিম, ব্রোকলি, টমেটো, গাজর, আলু, অন্যান্য সবজি, ছোলা, সিমের বিচি, মুগ ডাল ইত্যাদি দিয়ে স্বাস্থ্যকর ও রুচিসম্মত রোল তৈরি করে দিতে পারেন।
  • সহজে নষ্ট হয়ে যায় এরকম খাবার শিশুকে দিবেন না।
  • খাবার বক্সে দেয়ার সময় সুন্দর করে সাজিয়ে উচিত।
  • বাচ্চাদের নাস্তা দৈনিক খাবারের এক–তৃতীয়াংশ হওয়া উত্তম।
  • শিশুদেরকে এমন ধরণের খাবার দেওয়া যাবে না, যেগুলো ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যায়।
  • শিশুরা ঝটপট খেয়ে নিতে পারে এমন খাবার টিফিনে দিতে হবে।
  • টিফিন সুস্বাদু ও আকর্ষনীয় করার জন্য বিস্কুটের গুড়া, টেস্টি সল্ট, অতিরিক্ত লবন ও কোনো ধরণের রঙ ব্যবহার করবেন না।

  • শিশুদের টিফিনে ভাজাপোড়া খাদ্য না দেওয়াই ভালো।
  • পরিমাণে অল্প কিন্তু পুষ্টি উপাদান বেশি আছে এ ধরণের খাবার টিফিনের জন্য নির্বাচন করুন।
  • যেসব বাচ্চারা দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকে তাদেরকে দু,বার খাওয়ার মতো টিফিন দেওয়া উত্তম।
  • নতুন নতুন খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করুন।
  • বাচ্চাদের টিফিনে ডিম সেদ্ধ করে দেওয়া ভালো। মাঝে মাঝে ডিম ভেজে স্যান্ডচুইচ বানিয়ে দিতে পারেন।
  • অনেক শিশুরা পনির খেতে পছন্দ করে তাই সপ্তাহে ১-২ দিন এটি দেওয়া যেতে পারে।
  • মাঝে মাঝে সকালে নাস্তার পর শিশুকে ডাবের পানি খাওয়াতে পারেন।
  • শিশুদের বয়স অনুপাতে সারা দিনের প্রয়োজনীয় মোট পুষ্টির ওপর নির্ভর করে টিফিন তৈ করা উচিত।
  • টিফিনে মাংসের পরিবর্তে সবজির প্রধান্য রাখুন।
  • টিফিন তৈরির ক্ষেত্রে সন্তানের পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিন।

জেনে রাখুনঃ

  • ব্রিটেন ও যুক্ত্রারাষ্ট্রের একদল গবেষক স্কুলের শিশুদের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, শিশুদের মোটা হওয়া, হৃদরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, লিভারে সমস্যা প্রভৃতির মূল কারণ ফাস্টফুড ও কোলা। তারা আরও লক্ষ করেছেন যেসব ছাত্রছাত্রী বাসায় স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা করে বা স্কুল-কলেজে নিয়ে আসে তারা ৭০% সুস্থ ও নীরোগ। আর যারা না খেয়ে স্কুল-কলেজে আসে ও ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড কিনে খায় তারা ৯০% রোগাক্রান্ত, মোটা ও বিভিন্ন রোগের শিকার। ওই গবেষকেরা শিশুদের ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খাওয়া বন্ধ করার সুপারিশ করেছেন। তাদের ফলমূল খেতে পরামর্শ দিয়েছেন এবং সর্বপ্রকার কোলা নিষিদ্ধ করেছেন।

  • ৪-৫ বছরের শিশুদের প্রতিদিন ১ হাজার ৭৫০ কিলোক্যালরি পুষ্টির প্রয়োজন হয়। আর ৭-৯ বছরের শিশুদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি পুষ্টির দরকার।প্রতি বছর এ চাহিদা ১০০কিলোক্যালরি করে বাড়ান যেতে পারে।
  • তেল, চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, চকলেট ও আইসক্রিম ইত্যাদি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার বাচ্চাদের অন্ত্রে খাদ্যের চলনকে ধীর করে দেয়।

পরামর্শঃ

  • বাচ্চাদেরকে প্লাস্টিক বক্সের পরিবর্তে স্টিল বা সিলিকনের টিফিন বক্স ও বোতল দিন।
  • শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করার উৎসাহ দিন ও হাত ধোয়া নিশ্চিত করুন।
  • টিফিন বক্সের সঙ্গে চামচ, টিস্যু ও হাত ধোয়ার উপকরণ দিতে ভুলবেন না।
  • বাচ্চাদেরকে পক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
  • বাইরের খাবার না খাওয়ার জন্য সন্তানকে ধমক না দিয়ে বুঝিয়ে বলুন।

আরও পড়ুনঃ কোন খাবার কতদিন ফ্রিজে রাখবেন।


Spread the love