গণিত এমন একটি বিষয়—যেখানে একজন শিক্ষার্থী চাইলে একদম ১০০ তে ১০০ নম্বর পেতে পারে। কারণ এতে মুখস্থের চেয়ে বুঝে সমাধান করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা গাণিতিক ভিত্তি (concept) এ ভালো, তাদের জন্য সহজেই ভুল না করে পরীক্ষায় সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি নম্বর হারানোর ঝুঁকিও থাকে। অন্য যেকোনো বিষয়ের তুলনায় গণিতের একটি ছোট ভুল পুরো প্রশ্নের নম্বর কেটে নিতে পারে। আজ আমরা গণিতে ১০০ তে ১০০ পাওয়ার সহজ ও কার্যকরী কিছু কৌশল শিখব।
গণিতের পরীক্ষায় ১০০% নম্বর পাওয়ার কৌশল
১. NCTB বই ১০০% নম্বরের উৎস
- প্রতিটি অধ্যায়ের উদাহরণ + অনুশীলনী নিজে হাতে করো।
- সব অধ্যায় গুরুত্ব দিয়ে পড়ো, কারণ যেকোনো প্রশ্ন আসতে পারে।
- বোর্ড বইয়ের “বোঝাপড়াভিত্তিক প্রশ্ন” বাদ দিও না।
- প্রয়োজন হলে গাইড বই ব্যবহার করো, কিন্তু বোর্ড বইয়ের বাইরে যেও না।
২. বেসিক বা মূল ধারণা পরিষ্কার করো
- প্রত্যেক অধ্যায়ের মূল ধারণা (Concept), সূত্র ও নিয়ম ভালোভাবে বোঝো।
- গাণিতিক নিয়ম, ধারা, প্যাটার্ন সব বোঝার চেষ্টা করো।
- সূত্র মুখস্থ নয়, সূত্র প্রয়োগ করে সমস্যা সমাধান শিখতে হবে এবং বুঝু — “কোথায় কোন সূত্র লাগবে?”
- বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি—প্রতিটি টপিকের বেসিক ক্লিয়ার থাকা জরুরি।
৩. প্রতিদিনের রুটিনে গণিত রাখো
- গণিতকে প্রতিদিনের অভ্যাস বানাও এবং হাতে কলমে প্রতিদিন ৮–১২টি অংক করো।
- অন্তত ১.৫–২ ঘণ্টা শুধু গণিত অনুশীলন করো।
রুটিন:
সময় | কাজ |
সকাল ৭–৮টা | বোর্ড বইয়ের উদাহরণ সমাধান |
বিকাল ৪–৫টা | অনুশীলনী থেকে বাছাইকৃত সমস্যা |
রাত ৯–১০টা | বিগত প্রশ্ন বা ভুল সংশোধন |
৪. ভুল খাতা তৈরি করো
- যেসব অংকে ভুল করো, সেগুলো আলাদা খাতায় করে ভুলের কারণ, ঠিক উত্তর এবং সংশোধিত পদ্ধতি পাশে লিখে রাখো।
- প্রতিসপ্তাহে একবার ভুলগুলো রিভিশন করো তাহলে পরীক্ষার আগের দিন এই খাতা থেকে দ্রুত রিভিশন করা যাবে।
৫. বিগত ৫-১০ বছরের বোর্ড প্রশ্ন চর্চা করো
- অধ্যায়ভিত্তিক বোর্ড প্রশ্ন সমাধান করো।
- যেসব প্রশ্ন বারবার আসে, সেগুলোর জন্য আলাদা গুরুত্ব দাও।
- কোন অধ্যায় থেকে কত মার্কের প্রশ্ন আসে এবং কোন অধ্যায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা খেয়াল রাখতে হবে।
৬. শর্টকাট কৌশল আয়ত্ত করো
- সময় বাঁচাতে ও গণনা দ্রুত করতে শর্টকাট ট্রিকস শেখো।
- বিশষ করে শতকরা, লাভ-ক্ষতি, গতি-সময়, বীজগণিতে বিশেষ ট্রিক।
- ট্রিকস শুধু তখনই ব্যবহার করো, যখন বুঝে নিঃসন্দেহ হও। না হলে উত্তর ভুল হতে পারে এবং নম্বর কাটা যাবে।
৭. সময় ধরে Model Test Practice করো
- ২ ঘণ্টা সময় রেখে নিজের মতো করে প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা দাও।
- প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১টি পূর্ণাঙ্গ Model Test দাও।
- এতে সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
৮. রিভিশনের জন্য রুটিন তৈরি করো
- একবার পড়া মানেই শেষ নয় — ভুলে যাবেই, তাই রিভিশন দাও।
রিভিশন চার্ট:
অধ্যায় শেষ | ১ম রিভিশন | ২য় রিভিশন | ৩য় রিভিশন |
শনিবার | মঙ্গলবার | পরের শনিবার | ১৫ দিন পর |
৯. আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা, মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি
- ভয় নয়, আত্মবিশ্বাস আনুন— “আমি পারব” মনোভাব রাখুন।
- টেনশন না নিয়ে মন শান্ত রাখো।
- ভারী খাবার না খেয়ে হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাও।
- ঘুম ৭–৮ ঘণ্টা নিশ্চিত করো।
১০. পরীক্ষার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করো
পরীক্ষার আগের প্রস্তুতি:
- মডেল টেস্ট প্রশ্ন সমাধান।
- ভুল খাতা থেকে দুর্বল জায়গাগুলো রিভিশন।
- কঠিন অধ্যায়গুলোতে আবার ফোকাস।
পরীক্ষার দিন:
- কলম, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, প্রবেশপত্র — সব প্রস্তুত রাখো।
- সময় ঠিকমতো বণ্টন করে অংক করো।
- ১ম প্রশ্নে বেশি সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যাও।
- গাণিতিক ধাপ পরিষ্কার করে লেখো (Step by Step)।
এক নজরে গণিতে ১০০% নম্বর পাওয়ার চার্ট
কৌশল | করণীয় |
বোর্ড বই | উদাহরণ ও অনুশীলনী একটিও বাদ না দিয়ে ১০০% সম্পন্ন করো |
মূল ধারণা পরিষ্কার | সূত্র ও নিয়ম বোঝে ব্যবহার করো, শুধু মুখস্থ নয় |
প্রতিদিনের অনুশীলন | কমপক্ষে ৮–১২টি অংক লিখে চর্চা করো |
ভুল খাতা তৈরি | ভুলগুলোর নোট রাখো ও নিয়মিত সংশোধন করো |
বিগত বোর্ড প্রশ্ন | অধ্যায়ভিত্তিক ৫–১০ বছরের প্রশ্ন সমাধান করো |
Model Test | সপ্তাহে অন্তত ১টি ২ ঘণ্টার সময় ধরে মডেল টেস্ট দাও |
শর্টকাট কৌশল | বোঝে ব্যবহারের জন্য গতি-সময়, শতকরা, বীজগণিত ইত্যাদির শর্ট ট্রিক শিখো |
রিভিশন রুটিন | অধ্যায়ভিত্তিক ৩/৭/১৫ দিনের মধ্যে রিভিশনের রুটিন তৈরি করো |
পরিষ্কার উপস্থাপন | Step by step সমাধান লিখো + সূত্র, একক ও ধাপ পরিষ্কার রাখো |
শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি | ঘুম, বিশ্রাম, ও আত্মবিশ্বাস ধরে রাখো, পরীক্ষা আগের দিন রিভিশনে মনোযোগ দাও |
পরামর্শ
- অনেকেই মনে করে, “গণিতে ১০০ তে ১০০ পাওয়া শুধু মেধাবীদের কাজ” — এটা একেবারেই ভুল ধারণা।
- গণিতে পারফেক্ট স্কোর কোনো জাদু নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের ফল।
গণিতের গণিতের