ডায়াবেটিস (Diabetes) বা মধুমেহ হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ, যা মূলত রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) অতিরিক্ত মাত্রার কারণে ঘটে। এটি শরীরের ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়া বা ইনসুলিনের অভাবের ফলে হয়। ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাব পড়ে, যা একাধিক লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই লক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবে সনাক্ত না করলে পরবর্তীতে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কেজানব, যা রোগ শনাক্তকরণে সহায়ক হবে এবং দ্রুত চিকিৎসার দিক নির্দেশনা দেবে।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও প্রাথমিক উপসর্গ
১. প্রচণ্ড পিপাসা
রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকার কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় বেশি পরিমাণে। তাই শরীর তৃষ্ণার্ত হয়ে বেশি পানি খেতে চায়।
২. বারবার প্রস্রাব হওয়া
রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ মূত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়ার জন্য কিডনির ওপর চাপ পড়ে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, বিশেষ করে রাতে বেশি।
৩. অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা
গ্লুকোজ কোষে সঠিকভাবে প্রবেশ করতে না পারায় শরীর শক্তির অভাবে বার বার ক্ষুধা অনুভব করে।
৪. ওজন কমে যাওয়া
যদিও ক্ষুধা বেশি থাকে, শরীর নিজের পেশী ও ফ্যাট ভেঙে শক্তি পেতে চায়, তাই ওজন হঠাৎ কমে যেতে পারে।
৫. দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া
উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের কারণে চোখের লেন্সে তরল জমে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
৬. ক্লান্তি ও দুর্বলতা
শরীর পর্যাপ্ত শক্তি না পাওয়ার কারণে সবসময় ক্লান্তি অনুভব হয়।
৭. ক্ষত বা জখম ধীরে সেরে যাওয়া
ডায়াবেটিসের কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যার ফলে ক্ষত দ্রুত সারে না।
৮. ত্বকে চুলকানি এবং সংক্রমণ
ত্বক শুষ্ক হওয়া এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৯. হাত-পায় ঝিনঝিনে বা অবশ ভাব
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝিনঝিনে বা অবশ ভাব হতে পারে।
১০. মুখ ও ত্বক শুষ্ক হওয়া
শরীরে পানি কমে যাওয়ার কারণে মুখ ও ত্বক শুষ্ক ও ফাটা অনুভূত হতে পারে।
১১. মেজাজ পরিবর্তন
রক্তে চিনির ওঠানামার কারণে হঠাৎ মেজাজ খিটখিটে বা বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে।
১২. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
অনেক সময় ডায়াবেটিসের কারণে ঘন ঘন বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সমস্যা হয়।
১৩. শ্বাসকষ্ট এবং মাথা ঘোরা
রক্তে চিনির পরিবর্তনের কারণে শারীরিক দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা হতে পারে।
১৪. সংক্রমণ বেশি হওয়া
ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যার কারণে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, স্কিন ইনফেকশন ও মুখে ফাঙ্গাস সংক্রমণ বেশি হয়।
See also
দ্রুত ভালো ঘুম হওয়ার সহজ ও কার্যকরী ৫ কৌশল
মারাত্মক বিপদ থেকে বাঁচতে হেডফোন যেভাবে ব্যবহার করবেন
জেনে রাখুন
- টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ সাধারণত হঠাৎ , দ্রুত লক্ষণ প্রকাশ পায়। অধিকতর ক্ষুধা, দ্রুত ওজন কমা, ক্লান্তি বেশি। অনেক সময় কিডনি সমস্যা বা কেটোঅ্যাসিডোসিস দেখা দেয়।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ ধীরে ধীরে আসতে পারে। লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে দেখা দেয়, অনেক সময় ১-২ বছরেও বোঝা যায় না।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- উপরের লক্ষণগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি একসাথে দেখা দিলে।
- প্রিডায়াবেটিস বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
- যদি ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন ও স্কিন ইনফেকশন হয়।
- বমি, পেটে ব্যথা ও দ্রুত শ্বাস দেখা দিলে।