হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা-উপেক্ষা নয়, সতর্ক থাকুন

হার্ট অ্যাটাক (Myocardial Infarction) একটি প্রাণঘাতী অবস্থা, যা সাধারণত হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে ব্লক সৃষ্টি হলে ঘটে। এই অবস্থায় হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে এর কার্যক্ষমতা হঠাৎ করে ব্যাহত হয়। হার্ট অ্যাটাক সাধারণত হঠাৎ শুরু হয় এবং দ্রুতগতিতে রোগীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করাই জীবন রক্ষার প্রধান উপায়। যথাযথ সময়ে চিকিৎসা শুরু করা গেলে হৃদপিণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি রোধ করা সম্ভব। নিচে হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে অলোচনা করা হল।

হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ

বুকে তীব্র অথবা চাপের অনুভূতি
হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হলো বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা বা চাপের অনুভূতি। এই ব্যথা অনেক সময় ধানুর মতো বা ভারী বোঝার মতো লাগতে পারে এবং কয়েক মিনিট থেকে দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এটি বিশ্রামে বা হালকা কাজ করলেও কমে না।

বাম বাহু, কর্ণে বা চিহ্নে ছড়িয়ে পড়া ব্যথা
হার্ট অ্যাটাকের সময় বাম বাহুতে অথবা মাঝে মাঝে ডান বাহু বা চিবুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা সরাসরি হৃদপিণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো কাঁধ, গলা বা পিঠে ও প্রকাশ পায়।

শ্বাসকষ্ট
হঠাৎ করে শ্বাস নিতে অসুবিধা, দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলতে থাকা বা হাঁপানি হতে পারে। কখনও কখনও বুকের ব্যথার সাথে বা তার আগে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, যা হৃদপিণ্ডে অক্সিজেনের অভাবের কারণে ঘটে।

অপ্রত্যাশিত ও অতিরিক্ত ঘাম
হার্ট অ্যাটাকের সময় শরীরে হঠাৎ করে প্রচন্ড ঘাম পড়তে পারে, বিশেষ করে ঠান্ডা ঘামের মতো। এটি স্নায়ুপ্রবাহী প্রতিক্রিয়া হতে পারে যখন শরীর জটিল অবস্থার সম্মুখীন হয়।

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সময় হালকা বমি বমি ভাব, বমি হওয়া বা গ্যাসট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দেয়, যা কখনো কখনো হজমের সমস্যা বা পাকস্থলীর ব্যথার সাথে মিশে যেতে পারে।

অস্বস্তি বা চেঁচামেচি ও হাড়ের ব্যথা
অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা হজমে অস্বস্তির সাথে মিশে যেতে পারে। এমন ক্ষেত্রে, সাধারণ পেটের জ্বালা বা অস্বস্তি হার্ট অ্যাটাকের সতর্ক সংকেত হতে পারে।

অপ্রতিরোধ্য দুর্বলতা বা ক্লান্তি
কিছু সময় হঠাৎ করে ও কারণ ছাড়াই গভীর ক্লান্তি বা দুর্বলতা বোধ করা যেতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে। এই ক্লান্তি সাধারণ কাজ করলেও বা বিশ্রামের পরও কাটে না।

হৃদস্পন্দনের অনিয়ম বা দ্রুত গতি
হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃদস্পন্দনের অসামঞ্জস্যতা, যেমন দ্রুত বা অনিয়মিত স্পন্দন অনুভূত হতে পারে। এই লক্ষণটি হৃদয়ের রিদমে পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে, যা অতিরিক্ত উদ্বেগ তৈরি করে।

ভীতির অনুভূতি বা অনির্বচনীয় উদ্বেগ
অনেক রোগী হার্ট অ্যাটাকের সময় হঠাৎ করে অপ্রতিরোধ্য উদ্বেগ বা এমন অনুভূতি পায় যেন কিছু মারাত্মক ঘটতে যাচ্ছে। এই মানসিক অবস্থাও শারীরিক লক্ষণের সাথে যুক্ত হতে পারে।

পেট বা দিকে ব্যথা
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক স্থানে যেমন পিঠ, দাঁত বা পেটের উপরের অংশে ব্যথা হিসেবে প্রকাশ পায়। এই লক্ষণগুলো হার্ট অ্যাটাকের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত হলে চিকিৎসকের সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করা জরুরী।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • উপরের লক্ষণগুলির মধ্যে একটি বা একাধিক দেখা দিলে অবিলম্বে ইমার্জেন্সি মেডিক্যালসার্ভিস (এম্বুলেন্স) অথবা ৯৯৯ বা স্থানীয় জরুরি নম্বরে কল করুন।
  • রোগীকে একটি চেয়ারে বসান বা মাথা উঁচু করে হেলিয়ে দিন।
  • শুয়ে পড়া বা দৌড়াদৌড়ি করা থেকে বিরত রাখুন।
  • রোগী যেন চাপমুক্ত থাকে এবং শ্বাস নিতে পারে তা নিশ্চিত করুন।
  • যদি রোগীর এলার্জি না থাকে এবং আগে কখনো চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাসপিরিন খেয়েছেন, তবে ১টি ৩০০ মি.গ্রা. অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খেতে দিন। এটি রক্ত পাতলা করে এবং হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ সচল রাখতে সাহায্য করে।
  • যদি রোগীর কাছে চিকিৎসকের দেওয়া নাইট্রোগ্লিসারিন থাকে, তবে নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করতে দিন। এটি হার্টে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • রোগী অচেতন হয়ে গেলে বা নিঃশ্বাস নিচ্ছে না, তবে তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর (CPR) শুরু করুন।
  • আপনি যদি CPR না জানেন, তাহলে শুধুমাত্র বুকে চাপ দেওয়া (chest compression) শুরু করুন – প্রতি মিনিটে ১০০-১২০ বার।
  • হার্ট অ্যাটাকের সময় রোগীকে পানি, চা, খাবার বা ওষুধ না দিয়ে চিকিৎসকের নির্দেশের অপেক্ষা করুন।
  • রোগীর নিকটবর্তী হাসপাতাল বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।
  • রোগীর পূর্বের ওষুধ বা চিকিৎসার ইতিহাস থাকলে প্রস্তুত রাখুন।

পরামর্শ

  • সময়ই জীবনের মূল চাবি। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ শুরু হওয়ার প্রথম ১ ঘণ্টা হচ্ছে “গোল্ডেন আওয়ার”। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  • হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু হবে, ক্ষতি তত কম হবে।
  • কোনো লক্ষণ অবহেলা না করে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
See also
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ ও প্রাথমিক উপসর্গ
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
দ্রুত ভালো ঘুম হওয়ার সহজ ও কার্যকরী ৫ কৌশল
শিশুদের যে খাবারগুলো ভুলেও খাওয়াবেন না

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top