বর্তমান সময়ে হেডফোন বা ইয়ারফোন অনেকের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ- গান শোনা, ক্লাস করা, ফোনে কথা বলা বা ভিডিও দেখাসহ সব ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহার হয়। তবে এর ভুল ব্যবহারে শ্রবণশক্তি হ্রাস, কানে ইনফেকশন, রাস্তায় দুর্ঘটনা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি ও মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। নিচে হেডফোনর গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা ও করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো, যা অনুসরণ করলে আপনি হেডফোনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

হেডফোন ব্যবহারের সঠিক উপায়

১. সঠিক হেডফোন নির্বাচন

ক) নয়েজ-ক্যান্সেলিং হেডফোন

  • বাইরের শব্দ কমায়, ফলে কম ভলিউমে শুনতে সুবিধা হয়।
  • তবে রাস্তায় ব্যবহারে বিপদ, কারণ ট্রাফিকের শব্দ শুনতে পাবেন না।

খ) ওভার-ইয়ার হেডফোন

  • ইয়ারবাডের তুলনায় কানের কম ক্ষতি করে, কারণ শব্দ সরাসরি ইয়ারক্যানালে প্রবেশ করে না।

গ) বোন কন্ডাকশন হেডফোন

  • কানে শব্দ না গিয়ে হাড়ের মাধ্যমে কক্লিয়ায় পৌঁছায়, ফলে কান খোলা থাকে (রাস্তায় নিরাপদ)।

২.ভলিউম নিয়ন্ত্রণে রাখুন

  •  “৬০/৬০ নিয়ম” মেনে চলুন: দিনে সর্বোচ্চ ৬০ মিনিট, ৬০% ভলিউমে।
  • স্মার্টফোনের সেটিংস থেকে ম্যাক্সিমাম ভলিউম লক করে দিন।
  • ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ (যেমন কনসার্টের শব্দ) ১৫ মিনিটের বেশি শুনবেন না। কারণ দীর্ঘক্ষণ ৮৫ ডেসিবেল (dB) এর বেশি শব্দ শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট করতে পারে।

৩. ব্যবহারের সময় সতর্কতা

  • প্রতি ৩০ মিনিট পর ৫-১০ মিনিট বিরতি দিন।
  • সপ্তাহে অন্তত একবার অ্যালকোহল টিস্যু বা কটন বাড দিয়ে ইয়ারবাড পরিষ্কার করুন, কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া জমে আপনার কানে ইনফেকশন হতে পারে।

৪. স্মার্টফোনে ভলিউম লিমিট সেট করুন

  • Android: Settings > Sound > Volume > Media Volume Limit.
  • iPhone: Settings > Music > Volume Limit.

৫. শিশুদের জন্য বিশেষ সতর্কতা

  • শিশুর ফোন/ট্যাবে Parental Control ব্যবহার করে ভলিউম ৮৫ dB-এ লক করুন।
  • দিনে ১ ঘণ্টার বেশি নয়, কারণ শিশুদের কান বেশি সংবেদনশীল।

৬. ইন-ইয়ার হেডফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

  • কানে ঢুকে যাওয়ায় ইনফেকশন বা শ্রবণনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • মাঝে মাঝে ওভার-ইয়ার হেডফোন ব্যবহার করাও নিরাপদ।

৭. বিশেষ পরিস্থিতিতে করণীয়

  • গাড়ি চালানোর সময় এটি ব্যবহার একদমই ব্যবহার করবেন না।
  •  রাস্তায় হাঁটার সময় এক কানে হেডফোন ব্যবহার করুন, যাতে ট্রাফিকের শব্দ শুনতেপান। নয়েজ-ক্যান্সেলিং বন্ধ রাখুন।
  • জিম বা ব্যায়ামের সময় ওয়্যারলেস হেডফোনের ব্যবহার করুন, যাতে জট লেগে দুর্ঘটনা না হয়।

৮. নিজস্ব হেডফোন ব্যবহার করুন

  • অন্যের হেডফোন ব্যবহার করলে জীবাণু ছড়ায়, কানে ইনফেকশন হতে পারে।
  • হেডফোন নিজের হলে সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।

৯. ঘুমানোর সময় হেডফোন ব্যবহার নয়

  • শোয়ার সময় হেডফোনে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লে তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ বা গলায় জখম হতে পারে।
  • দীর্ঘক্ষণ শব্দে ঘুমের গুণমানও খারাপ হয়।

১০. হেডফোন ব্যবহারে অনিয়মিত আচরণের পরিণতি

অনিয়মসম্ভাব্য বিপদ
উচ্চ ভলিউমে শোনাস্থায়ী শ্রবণশক্তি হ্রাস
দীর্ঘ সময় ব্যবহারমাথাব্যথা, শ্রবণ ক্লান্তি
অপরিষ্কার রাখাব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন

১১. দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা

  • বছরে একবার অডিওলজিস্ট-এর কাছে শ্রবণ শক্তি চেকআপ করুন।
  • হেডফোন ছাড়াও কিছু সময় কাটান, প্রকৃতির শব্দ শুনুন।
  • কানে ব্যথা বা শোঁ শোঁ শব্দ হলে অবিলম্বে ব্যবহার বন্ধ করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পরামর্শ

  • শ্রবণশক্তি একবার নষ্ট হলে ফিরে পাওয়া যায় না। তাইএটি ব্যবহারে সচেতনতাই পারে আপনার কানকে সারাজীবন সুরক্ষিত রাখার উপায়।
  • দীর্ঘক্ষণ হেডফোনের ব্যবহা্রে কানে চাপ বা ব্যথা হলে ২০-২০-২০ রুল মেনে চলুন। প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ড বিরতি নিন এবং ২০ ফুট দূরের কিছু দেখুন।

আরও পড়ুনঃ

হ্যাকার থেকে আপনার  ATM কার্ড যেভাবে নিরাপদ রাখবেন

সাইলেন্ট মুডে থাকা অথবা হারানো স্মার্টফোন খুঁজে পাবেন যেভাবে

ভুলেও গুগল-এ সার্চ করবেন না যে বিষয়গুলো। সতর্ক হোন আজই