আনারসের ইংরেজি হল Pineapple আর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে- Ananas comosus. এই ফল খেয়ে যেমন শরীরে পানির চাহিদা মেটানো যায় তেমনি দেহে পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। আসুন জেনে নিই আনারসের উপকারিতা ও অপকারি দিকগুলো।
আনারসের উপকারিতাঃ
- আনারসের উপকারিতা অনেক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। এক কাপ আনারসের জুস আমাদের দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭৩ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- জ্বর, জন্ডিস, ঠাণ্ডা লেগে গলা ব্যথা, মাথা ধরা এবং নাক দিয়ে সর্দি ঝরলে আনারস খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- আনারসে প্রচুর পরিমাণ ব্রোমোলিন রয়েছে। এই ব্রোমোলিন টিউমার ও ফোঁড়া প্রতিরোধ করে।
- আনারস দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে শিরা-ধমনির দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।
- আনারসের উপকারিতা অনেক রয়েছে, এতে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- আনারস ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, ব্রণ এবং ত্বকের ইনফ্লামেশন প্রতিরোধ করে। এছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে ও ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে।
- আনারসে চুল পড়ার সমস্যা দূর হয়, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং মাথার তালুর ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- গলা ও ফুসফুস থেকে মিউকাস সরে যেতে সাহায্য করে। যারা দীর্ঘ দিন কফের সমস্যা ভুগছেন তারা আনারসের জুস খেলে এর থেকে পরিত্রান পেতে পারেন।
- দাঁত ও মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিক থাকে।
- কৃমি দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত। তবে অবশ্যই অ্যাসিডিটি থাকলে খালি পেটে আনারস ক্ষতি করতে পারে।
- এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এ রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এতে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।
- আনারস হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস অনেক উপকারি।
- হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে আনারসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
আনারসের অপকারিতাঃ
- যাদের দাঁতে কেভিটিস ও জিংজাইভেটিভস এর সমস্যা আছে তাদের জন্য আনারস ক্ষতিকর।
- কাঁচা আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমাণে এসিডিটি যা আমদের মুখের ভিতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে এবং ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেকের পেটে ব্যথাও হতে পারে।
- আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি। আনারসের ২ টি চিনি উপাদান সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
- আনারস বেশি পরিমাণে খাওয়ার কারণে নারীদের পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
সতর্কতাঃ
- আনারস খাওয়ার আগে বা পরে দুধ খেলে বিষক্রিয়া হয়। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
- আনারস খাওয়ার কারণে নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় নারীদের আনারস এড়িয়ে চলা উচিত।
- যাদের দেহে বাতের ব্যথা আছে কিংবা সন্দেহ করা হচ্ছে বাত হতে পারে তাদের আনারস খাওয়া উচিত নয়।
- আনারস খাওয়ার ফলে অ্যালার্জী দেখা দিতে পারে। তাই কেটে লবন পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এভাবে ধুয়ে খেলে অ্যালার্জী হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা।
পরামর্শঃ
- আনারস রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে ২ দিন খেতে পারেন।
- কাঁচা আনারস ক্ষতিকর ও বিষাক্ত। কখনো কাঁচা আনারস খাবেন না।
- আনারস কাটার সময় ভেতরে থাকা সাদা শক্ত অংশটি কেটে ফেলে দিন। এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।
- অ্যান্টি-বায়োটিক ওষুধ খেলে আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আনারস খাওয়ার পর ত্বকে র্যাশ, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া বা নিঃশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।