Spread the love

সঠিক মাত্রায় পুষ্টির অভাবে অনেকের অল্প বয়সেই চুল পাকা শুরু হয়। বিশেষ করে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১২, কপার, মিনারেল, জিঙ্ক ও আয়রনের অভাবে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কম বয়সে চুল পাকার পেছনে জিনগত প্রভাবের পাশাপাশি, হরমোনের মাত্রা অসমান, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা বা থাইরয়েড কম পরিমাণ থাকা, মেলানিনের অভাব, মানসিক চাপ, অস্থিরতা, ধূমপান ও দূষণ প্রভৃতি বিষয় কাজ করে। আসুন জেনেনিই  বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক ব্যবহার না করে পাকা চুল কালো করার উপায়।

আমলকি ও জবাঃ

৩ টেবিলচামচ পরিমাণ জবাফুল ও জবাপাতার পেস্ট বানিয়ে তার সাথে ৩ টেবিলচামচ পরিমাণ আমলকি গুঁড়ো মিশিয়ে পাতলা করে নিন। এই মিশ্রণটি ভালোভাবে চুলে মেখে ১ ঘণ্টা রাখুন। এরপর সালফেট মুক্ত  শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করলেই চুল পড়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি চুল কালো হতে শুরু করবে।

লেবুর রস ও আমলকিঃ

পরিমাণ মত আমলকি বেটে নিয়ে এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

নারকেল তেল এবং লেবুর রসঃ

২ চামচ নারকেল তেল ও ১ চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। সুফল পেতে সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

গাজরের রসঃ

চুল পাকার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে নিয়মিত ১গ্লাস গাজরের রস খেতে পারেন। গাজরের রস সরাসরি চুলে লাগানোর চেয়ে মুখে খাওয়াই বেশি উপাকারি।

আদা ও মধুঃ

পাকা চুল কালো করতে দৈনিক এক বার কিছু আদা এবং মধু একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

আমলকির ব্যবহারঃ

লোহার কড়াইয়ে ১০০ গ্রাম শুকনা আমলকির টুকরা তৈল ছাড়া ভাজুন। আমলকি কালো হয়ে আসলে ১ গ্লাস পানি দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এর পর কিছু সময় নিয়ে আমলকি ঠাণ্ডা করে মিহি করে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। পেস্টটি মাথায় লাগিয়ে  ২ ঘন্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন। এ পেস্ট ব্যবহার করলে শ্যাম্পু বা অন্য কোনো প্রসাধনী চুলে লাগানো যাবে না। নিয়মিত ব্যবহার করার পর সাদা চুল কালো হয়ে আসলে সপ্তাহে বা মাসে একবার করে ব্যবহার করতে পারেন।

জবাফুল ও কারি পাতাঃ

কয়েকটি জবা ফুলের পাপড়ি ও কারি পাতা ৩ চামচ নারকেল তেলে গরম করুন এবং এগুলো কালো হতে শুরু করলে আঁচটা বন্ধ করে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেকে নিন। তেলটা ভালো করে মাথায় লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে সালফেট মুক্ত  শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলেই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।

পেঁয়াজের রস ও অলিভ অয়েলঃ

মাঝারি আকারের ১টি পেঁয়াজ টুকরো টুকরো করে কেটে ১ চামচ অলিভ অয়েলের সাথে মেখে কিছু সময় রেখে দিন। এরপর পাতলা কাপড়ের মধ্যে পেঁয়াজের টুকরো গুলো রেখে ভালো করে চিপে রস বের করে নিতে হবে। এ রস চুলে ও মাথায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনিং করে নিন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহারে চুল কালো হওয়ার পাশাপাশি, চুল পড়া কমে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

নারকেল তেল ও তিল তেলঃ

রাতে শোয়ার আগে, তিল তেল ও নারকেল তেল ২ চামচ করে একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে ১৫ মিনিট ধরে চুলে লাগান। সারারাত এভাবে রাখার পর সকালে তোয়ালে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। ৩০ মিনিট পর সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২-৩ বার করে কয়েক মাস ব্যবহার করলে সাদা চুল কাল হতে শুরু করবে।।

আলুর খোসার ব্যবহারঃ

১ কাপ আলুর খোসার জন্য পরিমাণ মত কিছু পানি ফুটিয়ে নিতে হবে।। ফুটন্ত পানিতে আলুর খোসা ছেড়ে দিয়ে, পানির রং কালো হওয়া পর্যন্ত জাল দিন। এরপর নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। কালো পানিটুকু ঝাঁঝরি দিয়ে একটি আলাদা পাত্রে রাখুন। তারপর চুলে ভালোভাবে মেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনিং করে নিন। সপ্তাহে ২-৩ দিন করে ১-২ মাস  নিয়মিত ব্যবহার করলে পাকা চুল আর দেখা যাবে না।

মেথি ও নারকেল তেল দিয়ে চুল কালো করার উপায়ঃ

রাতে ঘুমানোর আগে, নারকেল তেল গরম করে তাতে মেথি দানা দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এর পর নামিয়ে কুসুম গরম থাকতে ছেঁকে নিয়ে তেলটুকূ ভাল করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। পরদিন সকালে উঠে সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করলে ভালা ফল পাবেন।

নারকেল তেল ও ঝিঙেঃ

১ কাপ শুকিয়ে রাখা ঝিঙে ১ কাপ  নারকেল তেলের মধ্যে ডুবিয়ে মুখ বন্ধ করে একটি পাত্রে রেখে দিন। ৪ দিন পর ঐ পাত্র থেকে ৩ চামচ তেল কুসুম গরম করে ২০ মিনিট ধরে চুলে ভালো করে লাগান। ১ ঘন্টা পর সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এ পদ্ধতি বলম্বন করলে চুল কালো হতে শুরু করবে।

চায়ের নির্যাসঃ

১ কাপ পানিতে ২-৩ চামচ চা পাতা ফুটিয়ে নির্যাসটি বের করে নিন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে নিয়ে চুলে ভালো করে লাগান। ১ঘণ্টা পর  সালফেট বিহীন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

সর্ষের তেল ও ক্যাস্টর অয়েলঃ

২ চামচ সর্ষের তেলের সাথে ১ চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে গরম করে নিন। নামিয়ে কুসুম গরম থাকতে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগান। ৩০ মিনিট পর সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনিং করুন।

মেথির ব্যবহারঃ

২ চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন মিহি করে বেটে পেস্ট তৈরি করুন। ভালো করে চুলে মেখে ১ ঘণ্টা পর সালফেট বিহীন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনিং করে নিন। সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

হেনা (মেহেদি পাতা) ও আমলকি দিয়ে চুলে রঙ করাঃ

আমলকি ও  তাজা মেহেদি পাতা একসঙ্গে বেটে সামান্য ব্ল্যাক কফি গুঁড়া মিশিয়ে নিন। তৈরি পেস্ট চুলে ভালো করে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু করে নিতে পারেন। মাসে একবার ব্যবহার করলে চুল কালো থকবে। এপদ্ধতি হলো সাময়ীক ভাবে অতি সহজে পাকা চুল কালো করার উপায়।

জেনে রাখুনঃ

  • জিনগত প্রভাবের  ফলে যাদের কম বয়স থেকেই চুল পাকে, তারা ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে কোনো উপকার পাবেন না।
  • কখনো পাকা চুল টেনে তুলবেন না। কারণ এতে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার মাথায় ও চুলে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করা উচিত।
  • চুলে রঙ করা ও অতিরিক্ত হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলে চুল সাদা হয়ে যায়।

পরামর্শঃ

  • প্রতিদিন কম করে ৮ ঘন্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করুন।
  • রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
  • এন্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন।
  • নিম তেল চুলে এবং মাথার ত্বকে লাগালে উপকার পাবেন।
  • মাসে ১-২ বার চুলে মেহেদি পাতা বেটে লাগাতে পারেন।
  • অতিরিক্ত চা, কফি ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।
  • দিনে ১-২ বার গ্রিন টি পান করুন।
  • নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করুন।
  • মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন এবং প্রচুর পানি পান করুন।
  • খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংস ও দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য রাখুন।

আরও পড়ুন, হঠাৎ করে পায়ের পেশিতে টান পড়লে কী করবেন?


Spread the love