শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন একবার স্পেনে গিয়ে খুব বিপদে পড়লেন। স্পেনের এক হোটেলে বসে তিনি কী কী খাবেন তা হোটেল বয়কে কিছুতেই বুঝাতে পারছেন না। হোটেল বয় স্পেনিশ ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা জানে না। শিল্পী স্পেনিশ ভাষা মোটেও জানেন না। তিনি ইংরেজি জানেন আর সামান্য ফরাসি ভাষা বলতে পারেন। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ফরাসিতে, ইংরেজিতে এমনকি ইশারায় নানা রকম ভঙ্গি করে খাবার মেনু বোঝাবার চেষ্টা করলেন। ফল খুব ভালো হল না। হোটেলে এমন কাউকে পাওয়া গেলনা যে ফরাসি বা ইংরেজি ভাষা জানে। মজার গল্প

এ দিকে খিদের চোটে পেট চোঁ চোঁ করছে। শেষে হোটেলের বয় শিল্পীকে নিয়ে গেলেন রান্না ঘরে। বাবুর্চি ও রাঁধুনিরা একটা একটা করে খাবার তুলে তাঁকে দেখালেন–কোনটি তিনি খেতে চান। অনেক্ষণ পর পাওয়া গেল। খুবই সামান্য জিনিস- চিংড়ি মাছ ভাজা খেতে চান। কিন্তু এই সামান্য খাবারের কথা বোঝাতে ঘন্টা খানেক সময় কাবার। আর ওয়েটার আর রাঁধুনিরা ব্যাপারটা নিয়ে এক চোট হেসে নিল। স্পেনে থাকতে হবে তাঁকে অনেক দিন। চিংড়ি ভাজা খাচ্ছে আর ভাবছে- ভাষা সমস্যা যে বিরাট সমস্যা। অন্তত হোটেলে খাবার চাইতে গেলে তা বোঝাতে আরো বেশি সমস্যা। ইংরেজি ও ফরাসি জানা লোক এখানে খুবই কম। কী করা যায়! হঠাৎ তাঁর মাথায় এক বুদ্ধি এল। ঠিক করলেন রাতেও এই হোটেলেই খেতে আসবেন আর বুদ্ধিটা কজে লাগাবেন।

তাঁর থাকার জায়গ থেকে হোটেল মোতামুটি কাছে। রাতের বেলায় হোটেলে এসে একই টেবিলে খেতে বসলেন। হোটেলের কর্মচারীরা তাঁকে দেখে দুপুরের কথা মনে করেই মুচকি হাসতে লাগল। কিন্তু শিল্পী জয়নুল তা ভ্রুক্ষেপ করলেন না। খুবই সপ্রতিভভাবে আঙ্গুলের ইয়াশারায় একজন ওয়েটারকে ডাকলেন। তার পর কোন কথা না বলে ছবি আঁকার খাতা খুলে ঝটপট কিছু ছবি এঁকে ফেললেন। ছবি আঁকার খাতা ওয়েটারের চোখের সামনে তুলে ধরলেন। ওয়েটার একেবারে অবাক। আনন্দে সে লাফাতে লাগল। আশেপাশের সবাই ছুটে এল। হুমড়ি খেয়ে পড়ল স্কেচ খাতার উপর। এমন মজার কান্ড ঘটাতে পারে তা রেস্তোরার কেউ ভাবতেই পারেনি। শিল্পী কী কী খাবেন, তা ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গরুর মাংস, মুরগির ডিম, ভাজি, স্যুপ, সবজি, দুধ- এসব এঁকে তীর চিহ্ন দিয়ে নির্দেশ করে দিয়েছেন। তিনি মদ পান করবেন না তাও ছবিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শিল্পীর কদর বেড়ে গেল। রেস্তোরার মালিক ও অন্যান্য অনেকেই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে এগিয়ে এলেন। বাড়িতে দাওয়াত পর্যন্ত করলেন। ভাষা সমস্যা আর তাঁর থাকল না।

=আরও পড়ুনঃ সুস্থ থাকতে নিয়মিত কেন আটা রুটি খাবেন ?