ছোলা বা বুট উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি ক্লোরোফিল, ভিটামিন ( এ, বি, সি, ডি, কে ), ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রণ, ফাইবার, ফ্যাট, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ফলিক এসিড, আঁশ ও খনিজ লবনের ভালো উৎস। ছোলা কাঁচা, সেদ্ধ ও ভাজা যে কোনো ভাবেই খাওয়া যায়। তবে  পুষ্টিবিদ্গণ বলেন-  কাঁচা ছোলা বেশি উপকারি ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

ছোলার পুষ্টিগুণঃ

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে- ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী ছোলায় রয়েছে-  খাদ্যশক্তি ৩৮৫ কিলোক্যালরি, জলীয় ৯.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৬ মিলিগ্রাম, শর্করা ৫৯.৮ গ্রাম, স্নেহ ৫.৬০ গ্রাম, ক্যারোটিন ১২৯ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২০.৪ গ্রাম, লৌহ ৯.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.৪৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৩.১ মিলিগ্রাম।

 ছোলা খাওয়ার উপকারিতাঃ

  • ছোলায় অধিক পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকায় শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমাতে চান তারা পথ্য হিসেবে নিয়মিত এটি খেতে পারেন।
  • ছোলাতে থাকা তেলের বেশির ভাগ পলি আনস্যাচুয়েটেড ফ্যাট, যা শরীরের অপ্রয়োজনীয় ও খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।
  • ছোলাতে থাকা দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় আঁশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আর এতে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬ ও পটাসিয়াম হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড। যা রেক্টাল ক্যান্সার ও ক্লোন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া ফলিক এসিড রক্তে অ্যালার্জির পরিমাণও কমিয়ে দেয়।

  • ছোলায় প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকায় যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • ছোলাতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁত এবং হাড় শক্ত করে। এতে থাকা ক্যালসিয়াম কোথাও কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক।
  • ছোলার শর্করার ইনডেক্সের পরিমাণ কম, তাই এটি শরীরে প্রবেশ করলে অস্থির ভাব দূর হয়।
  • ছোলাতে থাকা ভিটামিন ডি, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম মিলে শিশুদের হাড় বেঁকে যাওয়া এবং বয়স্কদের অস্থিক্ষয় রোধ করে।
  • গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে এটি বেশ কার্যকর।
  • প্রতিদিন এক মুঠো ছোলা খেলে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সীদের অস্থিক্ষয়ের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

  • ছোলার খোসাতে থাকা ফাইবার রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • বাড়ন্ত শিশুদের জন্য কাঁচা ও সিদ্ধ ছোলা খুবই উপকারি।
  • কাঁচা ছোলা চুলের গোড়া শক্ত করতে সহায়তা করে।
  • এতে থাকা পলি আনস্যাচুয়েটেড ফ্যাট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

আরও পড়ুনঃ ভালো তরমুজ চেনা ও কেনার কৌশল।

  • নিয়মিত কাঁচা ও সিদ্ধ ছোলা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
  • এটি খাদ্যনালীর ক্ষতিকর জীবাণু দূর করে।
  • ছোলায় থাকা ক্যালোরি দীর্ঘক্ষণ শরীরে শক্তি যোগায়।
  • এতে থাকা ভিটামিন বি মেরুদন্ডের ব্যথা ও স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়।

  • ছোলার শর্করা গ্লুকোজ হয়ে দ্রুত রক্তে যায় না। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উপকারি।
  • গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ১/২ কাপ ছোলা খান তাদের পায়ের অর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়।
  • ছোলাতে সালফার নামক উপাদান থাকায় মাথা গরম হয়ে যাওয়া ও হাত-পায়ের জ্বালাপোড়া কমায়।

সতর্কতাঃ

  • যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ছোলা খেতে পারবেন না।

পরামর্শঃ

  • উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা সীমিত পরিমাণে ছোলা খেতে পারবেন।
  • বড়দের তুলনায় ছোটদের হজম শক্তি কম থাকায়, তাদের জন্য সিদ্ধ ছোলা বেশি উপকারি।
  • বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি থাকলে এটি কম খাওয়া উচিত।
  • হাঁটা-চলার অভাবে যাদের ওজন বেড়ে গেছে তারা এ খাদ্য পরিহার করা উত্তম।
  • প্রতিদিন ৫০ গ্রাম পরিমান ছোলা খেলে মাছ ও গোস্তের ঘাটতি পূরণ হয়।
  • যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের খাবারের তালিকায় এটি রাখতে পারেন।