শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলোযোগের সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং একসময় তা প্রসাবের সাথে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ বলে। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কোনো ভাবেই এ রোগটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব নয়। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনে এ রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো কিছু ভ্রান্ত ধারণার কারণে রোগীরা রোগটি বাড়িয়ে তোলে। আসুন ডায়াবেটিস সম্পর্কিত প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
চিনি জাতীয় খাবারের কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকেঃ
এটি ভুল ধারণা। চিনি জাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় না, তবে ডায়াবেটিস হলে চিনি জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। চিকিৎসকদের মতে শুধু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেই নয়, বেশি মিষ্টি খাওয়া যেকোনো মানুষের পক্ষেই ক্ষতিকর। মূলত বংশগত ইতিহাস, জেনেটিক সমস্যা, মানসিক চাপ, স্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে এ রোগটি হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যায়াম ক্ষতিকরঃ
ধারণাটি সঠিক নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের এটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্যায়াম, স্বাভাবিক হাঁটা-চলা ও প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার গ্রহণে তারা সুস্থ থাকে।
তিতা স্বাদযুক্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিস কমেঃ
এটি একটি ভুল ধারণা। কার্বোহাইড্রেটপূর্ণ খাবার থেকে রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি হয়। এজন্য মিষ্টি না হলেও তিতা জাতীয় খাবারে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
ডায়াবেটিসের রোগী রক্তদান করতে পারে নাঃ
এ ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। শুধুমাত্র যারা নিয়মিত ইনসুলিন নেন তারাই শুধু রক্তদান করতে পারবেন না। বাকিদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থকলে রক্তদানে কোনো সমস্যা নেই।
ডায়াবেটিস বৃদ্ধ বয়সে হয়ঃ
এ ধারণা কখনো ঠিক নয়। কারণ যে কোনো বয়সের মানুষের ডায়াবেটিস হতে পারে।
ডায়াবেটিসের ঔষধ খেলে কিডনি বা বৃক্ক নষ্ট হয়ে যায়ঃ
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের ঔষধ খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায় এটি ভ্রান্ত ধারণা। অনেক ডায়াবেটিসের রোগী রক্ত পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক আসলে, ঔষধ সেবন বন্ধ করে দেন। এমনটি মোটেও ঠিক নয়।
ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণঃ
এ ধারনা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। মূলত গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের সঠিকভাবে শর্করার মাত্রা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে কোনো সমস্যা নেই।
ফল খেতে পারে নাঃ
ডায়াবেটিস রোগীরা ফল খেতে পারবেন। কারণ এতে ফাইবার রয়েছে। তাই ফ্রুকটোজ খুব ধীরে রক্তে মেশে। আর ইনসুলিন ছাড়াই আমাদের দেহ ফ্রুকটোজকে কাজে লাগাতে পারে।
ডায়াবেটিসের রোগীরা বাইরের খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎঃ
ভুল ধারণা থেকেই অনেকে এই কাজটি করে থাকেন। মূলত ডায়াবেটিসের রোগীরা যেকোনো রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন।
কম পরিশ্রম করা উচিৎঃ
এ ধারণা ঠিক নয়। ডায়াবেটিস রোগীরা অন্যদের মতই পরিশ্রম করতে পারেন।
মোটা মানুষের ডায়াবেটিস হয়ঃ
শরীরের ওজন বেশি হলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে অনেক মোটা মানুষের ডায়াবেটিস নেই।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের সন্তান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ঃ
ডায়াবেটিসে আক্রন্ত মায়ের সন্তান ডায়াবেটিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এ ধারণা ঠিক নয়।
আরও পড়ুনঃ রক্ত কেন দেবেন? জেনে নিন রক্তদানের উপকারিতা।
জেনে রাখুনঃ
- আক্রান্তদের ৫৭ শতাংশই জানেন না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে।
- ডায়াবেটিস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয় যখন আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন হরমোন তৈরি হয় না। অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন করতে সক্ষম হলেও তা কার্যকর উপায়ে ব্যবহার করতে পারে না।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা যেতে পারে।