নাক ডাকা অনেকের জন্যই বড় সমস্যা। কারণ সঙ্গে হার্টের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে নাক ডাকার সমস্যা থাকলে হার্টের বাম এবং ডান ভেন্ট্রিকুলারের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বেড়ে যায় স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি। ফলে ঘুমের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে হার্ট অ্যাটাক। মাঝবয়সীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২০ শতাংশ মহিলা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। ছোট বাচ্চাদের নাক ডাকার কারণে অক্সিজেন সঠিকভাবে না পেলে মস্তিষ্ক ও শারীরিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নাক ডাকার কারণঃ
- শরীরে বাড়তি ওজন, গর্ভাবস্থা ও কিছুটা বংশগত কারণে মানুষ নাক ডেকে থাকে।
- অ্যালার্জি, নাক বন্ধ হওয়া অথবা নাকের ভিন্ন গঠনও নাক ডাকার একটি কারণ।
- ঘাড়ের মাংসপেশিগুলো খুব বেশি স্বচ্ছন্দে থাকলে নাক ডাকা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- শরীরে ওজন বেশি হলে ও পেশি দুর্বল হলে নাক ডাকা হতে পারে।
- থাইরয়েডের সমস্যা বা গ্রোথ হরমোনের আধিক্যজনিত সমস্যা নাক ডাকার সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- সাইনোসাইটিজের সমস্যানাক ডাকার হতে পারে।
- অনেক সময় কণ্ঠনালী সরু হলেও নাক ডাকা শুরু হয়।
- লম্বা টান টান হয়ে শুলেও অনেকে নাক ডাকে।
- মদ্যপান, ধূমপান ও ঘুমের ওষুধ খেলে নাক ডাকা শুরু হয়।
- বয়সে নাকের পর্দা বাঁকা বা নাকে পলিপের কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।
নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়ঃ
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়মিত ১-২ টো রসুনের কোয়া চিবিয়ে, এক গ্লাস পানি খাবেন। তাহলেই দেখবেন নাক ডাকা বন্ধ হয়ে গেছে।
- প্রতিদিন শুতে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস গরম দুধে ২ চা-চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন। নাক ডাকা বন্ধ হবে।
- রাতে শুতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে যদি এক গ্লাস গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। নাক ডাকার সম্ভাবনা কমে যাবে।
- রাতে শুতে য়াওয়ার আগে দু’চামচ অলিভ অয়েল খেলে শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে রেসপিরেটরি প্যাসেজ খুলতে শুরু করে। আর একবার এমনটা হয়ে গেলে বাতাস চলাচলে কোনও বাঁধার সৃষ্টি হয় না। ফলে নাক ডাকার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
- নিয়মিত আদা চা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে ন্যাজাল ক্যাভিটি খুলতে শুরু করে। ফলে নাক ডাকার প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
- রোজ রাতে শুতে যাওয়ার সময় ১ গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ এলাচের গুঁড়ো মিশিয়ে খেয়ে নিন। উপকার পাবেন।
- টক জাতীয় ফল নাক ডাকা কমাতে সাহায্য করে। রোজ একটি করে টকজাতীয় ফল খান।
- নিয়মিত শরীরচর্চায় রক্তের চলাচল ও হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বাড়ায়। আর এতে করে ঘুমও ভালো হয়। তাই নাক ডাকা কমাতে হলে প্রতিদিন শরীরচর্চার অভ্যাস করা জরুরি।
- একটি অতিরিক্ত বালিশ নিয়ে মাথা একটু তুলে শোবেন। এতে নাক ডাকার থেকে রেহাই মিলবে।
- পাশ ফিরে ঘুমোনো অভ্যাস করুন এবং যতটা পারা যায় উঁচু বালিশে মাথা রাখুন।
- মেডিটেশন শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম সমাধান। ধ্যানের মাধ্যমে আপনার অজানা অনেক সমস্যার সমাধানও হতে পারে। হয়ত এর মাধ্যমে আপনি নাক ডাকা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
- উপরে উল্লেখিত উপায়ে যদি কোনো ফল না হয় তাহলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারেন।
পরামর্শঃ
- ঘুমের ওষুধ সেবন করার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।
- দিবাভাগে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন ।
- ভাজা খাদ্য, আইসক্রিম, ফ্রোজেন ফুড, চকোলেট, টোম্যাটো সস, পোট্যাটো চিপ্স এড়িয়ে চলুন।
- খাওয়ার ঠিক পরেই শোবেন না। একটু সময় নিয়ে, সম্ভব হলে কিছু সময় হাঁটা-হাঁটি করে ঘুমোতে যাবেন।
- রাত ৮ টার পর ভারি খাবার একেবারে পেট ভরে খাবেন না।
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা করুন।
- নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন।
আপনার পরামর্শা গুলো মেনে চলা উচিত। যে অভ্যাস গুলো পরিহার করলে নাক ডাকা ভাল হয় তা আমরা মেনে চলব।
Thank you so much for your valuable comment.