Spread the love

ঘরে পোকামাকড়ের উপদ্রব খুব সাধারণ একটি সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে পিঁপড়া, মশা, মাছি, তেলাপোকা, টিকটকিসহ অনেক অচেনা-অজানা পোকামাকড় ঘরে আসে। এটি শুধু ঝামেলাই বাড়ায় না, নানা রোগও ছড়ায়। একটু সচেতন হলে অতিসহজে ঘর পোকামাকড় মুক্ত করা সম্ভব। কীভাবে ঘরে পোকার উপদ্রব কমানো যায় তার কিছু কার্যকরী উপায় জেনে নিন।

পিঁপড়া

১। কর্পূর সামান্য পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন এবং পিঁপড়ার আনাগোনা স্থানে মিশ্রণটি ছিটিয়ে দিন। দেখবেন পিঁপড়া উধাও হয়ে গেছে।

২। জানালা, দরজা ও দেয়ালের ছিদ্রে গোলমরিচ গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। এতে পিঁপড়েরা ঘরে প্রবেশ করবে না। 

৩। যেসব জায়গায় পিঁপড়ে রয়েছে সেখানে দারুচিনি অথবা তেজপাতার গুঁড়া রেখে দিন। পিঁপড়া চলে যাবে।

৪। পিঁপড়ের উপর সাবান পানি স্প্রে করতে পারেন। সাবানের মধ্যে থাকা কেমিক্যাল পিঁপড়ে ধ্বংস করবে।

৫। বেকিং সোডা, চিনি ও ইস্ট। এই মিশ্রণ পিঁপড়া আসার পথে রেখে দিতে পারেন। পিঁপড়া মরে যাবে।

৬। পিঁপড়া গর্তের মুখে পিপারমেন্ট অয়েল ভেজানো তুলা রেখে দিন। পিঁপড়া কমে যাবে।

৭। কয়েক টেবিল চামচ লবণ গরম পানিতে গুলে নিন। এই মিশ্রণ ঠাণ্ডা করে নিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে পিঁপড়ার সম্ভাব্য সব জায়গায় স্প্রে করুন। পিঁপড়া কাছে ঘেসবে না।

৮। কয়েকটি পুদিনার পাতা এক গ্লাস পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন এবং স্প্রে করুন চারদিকে। পিঁপড়ার দল পালাতে থাকবে।

মাকড়সা

১। এক কাপ সাদা ভিনিগারের সঙ্গে জল মশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি ঘরের প্রতিটি কোনায় স্প্রে করুন। ভিনিগারে থাকা অ্যাসিডের ঝাঁজালো গন্ধ মাকড়সা সহ্য করতে পারে না। এই মিশ্রণের সাহায্যে ঘর থেকে খুব সহজেই মাকড়সা দূর হয়।

২। এসেনশিয়াল অয়েল বিভিন্ন কোনায় স্প্রে করে নিতে পারেন এতে মাকড়সা ঘর বাঁধবে না।

৩। ভিনিগারের সঙ্গে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে মাকড়সার জালে স্প্রে করে দিন। মাকড়সা ঘর থেকে পালাবে।

৪। পুদিনা পাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। তারপরে সেটি যে সব জায়গায় মাকড়সার জাল রয়েছে সেখানে স্প্রে করুন। মাকড়সা চলে যাবে।

৫। ঘরের যে জায়গাগুলোতে মাকড়সার আক্রমন বেশি সেখানে লেবুর স্প্রে করতে পারেন। এতে মাকড়সা থাকবে না।

তেলাপোকা

১। চিনির সাথে সমপরিমাণ বোরিক পাউডার মিশিয়ে ঘরের কোণায় একটি পাত্রে রেখে দিন। এতে তেলাপোকা কমে যাবে।

২। এক চামচ গোলমরিচ, কিছুটা রসুন আর অর্ধেক পেঁয়াজ বেটে তাতে এক লিটার পানি মেশান। সাবান পানিও মেশাতে পারেন । এবার রান্নাঘর ও বাথরুমে ছিটিয়ে দিন ওই মিশ্রণ। চাইলে ঘর মোছার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন। তেলাপোকা ঘর ছেড়ে পালাবে।

৩। বোরিক পাউডারের সঙ্গে আটা বা ময়দার গুঁড়ো মিশিয়ে ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে দিন । তেলাপোকা ঘরে থাকবে না।

৪। সপ্তাহে কয়েক দিন তেজপাতার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন। তেলাপোকা চলে যাবে।

ছারপোকা

১। ২৫০ গ্রাম পানির জন্য ৪ চা চামচ সেভলন নিবেন। সেভলন ভাল ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।  যেখানে ছারপোকা ঘুরে বেড়ায় সেখানে সেখানে স্প্রে  করে দিবেন। পর পর এক সপ্তাহ স্প্রে করুন দেখবেন আপনার ঘর পুরোপুরি ছারপোকা মুক্ত।

২। মাঝে মাঝে আসবাবপত্রে কেরোসিনের স্প্রে করুন। এতে ছারপোকা সহজেই পালাবে।

৩। ঘরের যে স্থানে ছারপোকার বাস সেখানে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করুন। দুই থেকে তিন দিন এভাবে স্প্রে করার ফলে ছারপোকা আপনার ঘর ছেড়ে পালাবে।

৪। মাসে দু’বার ন্যাপথলিন গুঁড়ো করে বিছানাসহ উপদ্রবপ্রবণ স্থানে ছিটিয়ে দিয়ে রাখুন। দেখবেন ঘরে ছারপোকা হবে না।

৫। বিছানার নিচে শুঁকনো অথবা কাচা পুদিনা পাতা রাখলে ছারপোকা পালিয়ে যায়।

৬। এক লিটার পানিতে ডিটারজেন্ট ঘন করে মিশিয়ে স্প্রে করুন। এ উপায়ে স্প্রে করার ফলে ছারপোকা সহজেই মরে যাবে।

মশা

১। লেবু কেটে ভেতরের অংশে কিছু লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গ পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র মাথার দিকের অংশ বাইরে রাখবেন। এর পর লেবুর টুকরা একটি পাত্রে ঘরের কোণায় রেখে দিন। এতে কয়েক দিন মশার উপদ্রপ থেকে মুক্তি পাবেন। জানালার গ্রিলের পাশ্বে রাখলে ঘরে মশা ঢুকবে না।

২। ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে হলুদ কালারের বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার করুন। হলুদ আলো থেকে মশা দূরে থাকে।

৩। ঘরের কোণে অন্ধকার জায়গায় একটা পাত্রে সামান্য গরম পানিতে কর্পূর মিশিয়ে রেখে দিন। এতে মশার উপদ্রপ কমবে।

৪। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখুন। এ সময় ঘর মশা বেশি প্রবেশ করে।

মাছি

১। একটি স্প্রে বোতলে কিছু গোলমরিচের গুঁড়া আর পানি নিন। খুব ভাল করে ঝাঁকিয়ে নিন। এরপর এটি দিয়ে ঘরের বাইরে ও ঘরে মধ্যে স্প্রে করুন। দেখবেন আপনার বাসায় আর মাছি আসছে না।

২। বারান্দায় বা জানলার কাছে একটি তুলসী গাছ রাখুন। দেখবেন মাছি আপনার বাসায় আসছে না।

৩। একটি পাত্রে আপেলের সাথে কয়েক টুকরা লবঙ্গ দিয়ে রান্নাঘরের জানলায় বা খাওয়ার ঘরের জানালার পাশে রেখে দিন। ঘরে মাছি ঢুকলেও খুভ দ্রুত থেকে বের হয়ে যাবে।

৪। ময়লা আবর্জনার জায়গায় বরিক পাউডার ছিটিয়ে দিন। এতে মাছির উপদ্রপ কমে যাবে।

৫। একটি স্বচ্ছ প্লাসটিকের ব্যাগে পানি ভরে জানালার বাইরে ঝুলিয়ে দিন। মাছি ঘরে আসবে না। তবে এটি দিনের আলোতে কার্যকরী হবে।

৬। মাছি ঘরে আসলে ফ্যান ছেড়ে দিন। ফ্যানের বাতাসে মাছি বেশিক্ষণ থাকতে পারেনা।

৭। কর্পূরের ধোঁয়া ঘরে কিছুক্ষণ রাখুন। দেখবেন ঘরে মাছি আর আসছে না।

৮। কয়েক টুকরো শসা রান্নাঘরের জানলায় বা খাবার ঘরের জানলার পাশে রেখে দিন। দেখবেন মাছি আপানর ঘরে আর আসছে না।

উইপোকা

১। নিমপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এবার বইয়ের তাকে, কাঠের আলমারি বা অন্যান্য আসবাবপত্রের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দিন গুঁড়ো করা নিমপাতা। প্রতি সপ্তাহে একবার করে নিমপাতা গুঁড়ো ছড়ালেই উইপোকা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

২। কালো জিরা একটা কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে যেখানে যেখানে উইপোকা বাসা বেঁধেছে, তার আশেপাশে রেখে দিন। দেখবেন উইপোকা সব পালাবে।

৩। যেখানে উইপোকা লেগেছে, সেখানে লবণ ছিটিয়ে দিন।

৪। কর্পুর গুঁড়ো করে প্যারাফিনের সঙ্গে মিশিয়ে ঘরের দেয়ালে ও আসবাবের গায়ে দিতে পারেন। এর গন্ধও উইপোকা সহ্য করতে পারে না।

টিকটিকি

১। গোলমরিচের গুঁড়া বা মরিচের গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে টিকটিকি উপদ্রুত এলাকায় স্প্রে করলে ঘরে টিকটিকি আসে না।

২। টিকটিকির চলাচলের পথে বা জানালার কোণে কয়েক টুকরা পেঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিলে সহজেই জব্দ হবে টিকটিকি

৩। জানালার কোণে বা ভেন্টিলেটরে রেখে দিন রসুনের কোয়া। রসুনের কোয়ায় গন্ধে বাড়ি টিকটিকি মুক্ত হবে সহজেই।

৪। টিকটিকির উৎপাত যেখানে বেশি, সেখানে ছড়িয়ে রাখুন ডিমের খোসা। এই গন্ধে অল্প সময়েই টিকটিকি চলে যাবে।

৫। টিকটিকি ময়ূরের পাখা বা পালক অনেক ভয় পায়। যেখানেই ময়ূরের পালক টিকটিকি দেখতে পায় এর আর ধারের কাছে আসতে চায় না টিকটিকি। তাই ঘরের ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখুন কয়েকটি ময়ূরের পালক। তারপর দেখবেন ম্যাজিক!

ইঁদুর

১। ইঁদুর তাড়াতে লবঙ্গও বেশ কার্যকরী উপাদান। লবঙ্গ গুঁড়ো করে পুঁটলি তৈরি করে উপদ্রব আছে, এমন স্থানে রেখে দিন।

২। ইঁদুর পেপারমেণ্টের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। একটি তুলোর বলে পেপারমেন্ট অয়েল ডুবিয়ে নিন। এবার তুলোর বলটি ইদুরের বাসার কাছে রেখে দিন। পেপারমেণ্টের গন্ধ শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে তাদের নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিবে এবং মারা যাবে।

অন্যান্য পোকামাকড়

১। এক অংশ ভিনেগার এবং দুই অংশ পানি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ঘরের আনাচে কানাচে ব্যবহার করুন। দেখবেন পোকামাকড় ধ্বংস হয়ে গেছে।

২। কিছু পরিমাণ পানির সাথে আট ফোঁটা পিপারমেন্ট অয়েল মিশিয়ে স্প্রে করুন। ভিনেগার এবং পিপারমেন্ট এসেনশিয়াল অয়েল একসাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এতে পোকামাকড় দূর হবে।

৩। বেকিং সোডা ছিটিয়ে রাখুন ঘরের বিভিন্ন স্থানে। কিছুদিন পর ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে বেকিং সোডা পরিষ্কার করে  আবার ব্যবহার করুন। এটি ঘরের পোকামাকড় দূর করে দেবে।

৪। ঘর স্যাভলন ও ভিনেগার দিয়ে মুছে নিন। এতে পোকামাকড় অনেকটাই কমবে।

৫। শুকনো নিমপাতার গুঁড়ো রান্নাঘরের যেকোনো স্থানে ছড়িয়ে রাখলে পোকার উপদ্রব কমে যাবে।

৬। পুদিনা পাতা কুচি করে বিছানা বা ম্যাট্রেসের চারপাশে ছিটিয়ে দিন। এছাড়া কাপড়ের ভিতরে রাখতে পারেন। পোকামাকড় দূর করার পাশাপাশি কাপড়ে একটি সুন্দর গন্ধ পাবেন।

৭। বই, কাগজ, নথিপত্র ইত্যাদিকে পোকামাকড় এর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ন্যাপথালিন ব্যবহার করুন।

আরও পড়ুন, আম ফরমালিন মুক্ত কিনা চেনার সহজ উপায়।


Spread the love