Spread the love

বজ্রপাত বা বাজ এর ইংরেজি হলো Lightning । আমাদের দেশে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাত হয়ে থাকে। তবে এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। বিশ্বে প্রতি বছর ২৪ হাজারের বেশি মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারায় এবং আহত হয় এর দশ গুণ। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বজ্রপাতের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের আওতায় রয়েছে। পৃথিবীতে বজ্রপাতে প্রতিরোধের এখনো কোনো উপায় আবিষ্কৃত হয়নি। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রাণহানির আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব।

বজ্রপাতের সময় পাকা ভবনে আশ্রয় নিনঃ

বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা ও উঁচু জায়গায় থাকা যাবে না। কোনো পাকা ভবনে আশ্রয় নেওয়া উচিত।

উঁচু গাছ থেকে দূরে থাকুনঃ

উঁচু গাছের নীচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। কারণ বড় ও উঁচু গাছে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বিদ্যুৎ লাইন ও খুঁটির কাছাকাছি থাকা যাবে নাঃ

বিদ্যুৎ লাইন ও বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎ লাইন ও খুঁটির কাছাকাছি যাওয়া যাবে না।

জানালা থেকে দূরে থাকুনঃ

বজ্রপাতের সময় ঘরের ভিতরে অবস্থান করুন। জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ করে রাখুন।

আশেপাশে খেয়াল রাখুনঃ

বজ্রপাতের সময় রাস্তায় চলাচল করলে আশেপাশে খেয়াল রাখুন। যে দিকে বাজ বা বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি সে দিক এড়িয়ে চলুন।

পা ঢাকা জুতা পড়ুনঃ

চামড়ার ভেজা জুতা ও খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। একান্ত বের হতে হলে পা ঢাকা রাবারের জুতা পড়ে বের হবেন।

ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলুনঃ

ধাতব কোনো বস্তু স্পর্শ করা যাবে না। পাইপ, সিঁড়ির রেলিং, টেলিফোনের লাইন ও ধাতব কল ইত্যাদি স্পর্শ বা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পানি থেকে দূরে থাকুনঃ

পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই বজ্রপাতের সময় পুকুরে সাঁতার কাটা যাবে না। জলাবদ্ধ স্থান ও রাস্তায় জমে থাকা পানি থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।

একে অপর থেকে দূরে থাকুনঃ

বজ্রপাতের সময় উন্মুক্ত স্থানে একত্রে না থেকে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যেতে হবে।

গাড়ীর কাঁচে হাত দিবেন নাঃ

গাড়ীতে থাকলে গাড়ীর কাঁচে হাত দিবেন না। দ্রুত বাসায় চলে আসুন অথবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন।

কানে আঙ্গুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুনঃ

বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় থাকলে চোখ বন্ধ করে কানে আঙ্গুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। কখনো মাটিতে শুয়ে পড়বেন না।

বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে রাখুনঃ

বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত কোনো যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা যাবে না। কম্পিউটার, টিভি ও ফ্রিজের প্লাগ আগেই খুলে রাখুন। সম্ভব হলে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।

আরও পড়ুনঃ গাড়ী ডুবছে আপনি বাঁচবেন কিভাবে?

বজ্রপাতের পূর্ব লক্ষণ খেয়াল রাখুনঃ

বজ্রপাত হওয়ার আগে এর প্রভাবে ত্বক শিরশির করবে, চুল খাড়া হয়ে যাবে, ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ  এবং আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে।

কালো মেঘ দেখলে সতর্কতাঃ

আকাশে কালো মেঘ দেখলে নদী, পুকুর ও জলাশয়ের কাছে যাওয়া যাবে না।

আর্থিং সংযুক্ত রড ভবনে স্থাপন করুনঃ

বজ্রপাত থেকে নিরাপত্তার জন্যইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিয়েআর্থিং সংযুক্ত রড ভবনেস্থাপন করতে পারেন। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

ফোন ব্যবহার বন্ধ রাখুনঃ

বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন ও ল্যান্ডফোনের ব্যবহার বন্ধ রাখুন।

মাছ ধরা বন্ধ করুনঃ

বজ্রপাত চলাকালে সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকা, লঞ্চ ও জাহাজের ছাউনির নীচে অবস্থান করতে হবে।

ছাতা ব্যবহারে সতর্কতাঃ

বজ্রপাতের শুরু হলে ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করা যাবে না। প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।

জেনে রাখুনঃ

  • প্রতি সেকেণ্ডে সারা পৃথিবীতে ৪০-৫০ বার বিদ্যুৎ চমকায়।
  • একটি বজ্রপাত পূর্ণশক্তিতে আঘাত হানলে তার শক্তি দাঁড়ায় হিরোশিমা-নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত বোমার সমান।
  • বজ্রপাতের ৭৫ ভাগ মেঘের মধ্যে ঘটে থাকে বাকি ২৫ ভাগ ভূপৃষ্টে আসে।
  • প্রায় বজ্রপাতেগুলোর স্থায়িত্ব হয় এক সেকেণ্ডের দশ ভাগের এক ভাগ।
  • বজ্রপাতের সময় শেষ বিদ্যুৎচমকটি দেখার পর বাইরের সব কাজ বন্ধ করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • বজ্রপাতে কেউ আহত হলে, বিদ্যুৎ শকে আহতদের মতো করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিন। আর যত দ্রুত পারেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।


Spread the love